Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ শিল্প ও সাহিত্য

নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

আজ ১৩ নভেম্বর, নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলা সাহিত্য ছাড়াও কর্মক্ষেত্রের যে শাখাতেই হাত দিয়েছেন তিনি সেখানেই তৈরি করেছেন নতুন ধারা। নন্দিত নরকে উপন্যাসের আশ্রয়ে সাহিত্যের আকাশে জ্বলে উঠেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। সহজ-সরল ভাষার সঙ্গে সংলাপধর্মী উপন্যাসটি সহজেই আকৃষ্ট করে সাহিত্যানুরাগীর মনন। পরের গল্পটি শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। টানা চার দশক আপন সৃষ্টিতে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে পাঠককে। সেই সূত্রে ধারণ করেছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জননন্দিত কথাসাহিত্যিকের পরিচয়টি। 

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কীর্তি রেখেছেন শিল্প-সাহিত্যের বেশিরভাগ শাখাতেই। একাধারে তিনি সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন বাংলার মানুষকে, অন্যদিকে নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, চলচ্চিত্র ও গান। তাঁর নির্মাণে উঠে এসেছে নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, বৃষ্টিসহ বাংলার অসামান্য সব ব্যঞ্জনা।

দেশের সবচেয়ে জননন্দিত এই কথাশিল্পীর জন্ম দিনে বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধসহ নানা প্রতিবেদন ছেপেছে পত্রিকাগুলো। লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে পরিবারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও টিভি চ্যানেল নিয়েছে নানা কর্মসূচী। 

সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর লেখকের ধানম-ির ‘দখিন হাওয়া’ ফ্ল্যাটে কাটা হয়েছে জন্মদিনের কেক। হুমায়ূনকে স্মরণ করে দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে কেক কেটেছেন লেখকের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন। এ ছাড়া আজ ভোরে শাওন তার দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন হুমায়ূনের স্মৃতিধন্য গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের নূহাশপল্লীতে। সেখানে লেখকের সমাধিতে নিবেদন করবেন ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি। মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে।

জন্মদিনের আয়োজন প্রসঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আজ আমরা ভাইবোনরা নূহাশপল্লীতে যাব। সেখানে সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি জিয়ারত করব।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা। এ মেলার আয়োজন করছে হুমায়ূনের বইয়ের প্রকাশকরা। এ দিন বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেক্ষে ‘হুমায়ূন সাহিত্যের বাঙালীর জীবন ও সমাজ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে আজ চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে ‘হুমায়ূন মেলা’ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল এগারোটা ৫ মিনিটে হিমুপ্রেমীরা হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হলুদ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন অঙ্গনের হুমায়ূন ভক্ত ও বিশিষ্টজনরা। উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে পরিবেশিত হবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান। হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে স্মৃতিকথা বলবেন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা। নৃত্য পরিবেশন করবে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ও অন্যান্য নৃত্যশিল্পী। আরো থাকবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে আবৃত্তি পরিবেশনা। মেলার স্টলগুলোতে থাকবে হুমায়ূন আহমেদের বই, হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্র ও নাটকের ভিডিও সিডি। স্টলে আরও থাকবে দেশী নানান পণ্যসামগ্রী। হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে চিত্রাঙ্কন করবে বিভিন্ন বয়সী শিশুশিল্পীরা।

পাঠক বিবেচনায় হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ’৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। বলা হয়, তার লেখা পছন্দ করেন না এমন মানুষও তার নতুন লেখাটি গোপনে পড়েন।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিক। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, বাদশাহ নামদার প্রভৃতি। রচনা ও পরিচালনা করেছেন বহু একক ও ধারাবাহিক নাটক। পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্রও। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জন্য জয় করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
 
হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) ইত্যাদি। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের ‘এনএইচকে’ টেলিভিশন তাকে নিয়ে ‘হু ইস হু ইন এশিয়া’ শিরোনামে পনেরো মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করে।

হুমায়ূন আহমেদের জš§ ১৯৪৮ সালের ১৩ নবেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন। রত্মগর্ভা জননী এই লেখকের আয়েশা ফয়েজ।

২০১২ সালে ১৯ জুলাই বর্ষার রাতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ক্যান্সার আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদ পাড়ি জমান অদেখার ভুবনে। আকাশচুম্বী জনপ্রিয় এ লেখকের মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিউইয়র্ক থেকে ২৩ জুন দেশে ফিরিয়ে আনা হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। সেখানে লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত ফুলের ভালবাসায় সিক্ত হন তিনি। পরদিন লেখককে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। সেখানেই অসীম ঘুমে শায়িত হয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ।