Opu Hasnat

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

রাজবাড়ীর পদ্মায় ইলিশ কুড়ানোর ধুম রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর পদ্মায় ইলিশ কুড়ানোর ধুম

এখন প্রতিদিনই পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে ভাসছে শত শত ইলিশ মাছ। ভেসে যাওয়া মাছ  কুরানোর ধুম পরেছে পদ্মা পারে। পদ্মা নদীর  রাজবাড়ী  জেলার দৌলতদিয়া থেকে পাংশা উপজেলার শিয়াল ডাঙ্গি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার নদী পথে এই  চিত্র দেখা যাচ্ছে  হরহামেশাই।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুনচী  এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে  জটলা বেধেছে  বেশ কিছু লোক, তারা উৎসাহ নিয়ে দেখছে নদীতে ভেসে যাওয়া ইলিশ কুরানো।

এ সময় ধুনচী এলাকার জেলে আলম হোসেনের ছেলে সিয়াম ১০ বছর  বয়সী ওই শিশু জানান, পদ্মায় ইলিশ ধরলে পুলিশে ধরে নিয়ে যায় তাই তার বাবা  বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে  নদীতে শত শত  ইলিশ স্রোতে ভেসে যাচ্ছে দেখে  সে  সাতরিয়ে প্রতিদিন ওই  ইলিশ কুরিয়ে  বিক্রি করছেন। গত শনিবার সারাদিন নদী থেকে সে ১৭ টি ইলিশ মাছ  সংগ্রহ করে  বিক্রি করেছেন সারে ৮ শত টাকা। 

রবিবার সকাল থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত সে ৯ টি ইলিশ  পেয়েছে  যা ৫ শত টাকা বিক্রি করতে পারবেন। শুধু   সিয়াম নয়, তার মতো আরো অনেক  শিশু এখন ইলিশ কুরানোর কাছে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন। কেউ বিক্রি করতে আবার কেউ  খাওয়ার জন্য ইলিশ মাছ কুরাচ্ছেন। 

ধুনচী এলাকার বাসিন্দা শাহিন মিয়া জানান,পদ্মা নদীতে এখন শত শত জাল ফেলা আছে, যে জালগুলোতে ইলিশ মাছ ধরা পরে অভিযানের কারনে দিনের বেলায় জাল ফেলা থাকলেও  নদীকে জেলেরা  নামেন না।ওই জালের মরা মাছগুলো ছুটে নদীতে ভাসছে। 

এদিকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলায় সরকারীভাবে ইলিশ মাছ শিকার করা, বিক্রি করা এমনকি পরিবহন করায় ও নিশেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারনে সরকারীভাবে প্রত্যেক জেলেকে ২০ কেজি করে চাল প্রনোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন জেলেরা। রবিবার  সকালে   রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান  চালিয়ে ২৭ জেলেকে আটক করে জেলা প্রশাসন  ও মৎস্য বিভাগ।

আটক হওয়া রাজবাড়ীর জেলে সাইফুল ইসলাম জানান, মাছ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। সারা বছর পদ্মায় ইলিশ পাওয়া যায় না। যে কারনে নিশেধ থাকলেও আমরা ঝুকি নিয়ে  ইলিশ ধরি। এখন  পদ্মায় জাল ফেললেই প্রতিবারে চার থেকে পাচ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যায়। সরকারীভাবে আমি কোন সাহায্য  সহযোগিতা পাইনি।

অপর এক জেলে সাইফুল ইসলাম জানান, সারা বছর আমরা এ  সময়টার দিকে চেয়ে থাকি, এ সময় ইলিশ ডিম দেওয়ার জন্য  রাজবাড়ীর পদ্মায় কম পানিতে ছুটে আসে। এ বছরও আমি একটি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে জাল  বানিয়েছি। একদিনও  মাছ ধরকে পারিনি। নৌকায় থাকা  জাল নিয়ে গিয়ে পুরিয়েছে  প্রশাসন। আমাদের যদি সরকারীভাবে সাহায্য করা হতো তবে আমরা নদীতে নামতাম না।

আটক হওয়া অপর জেলে নিয়ামত উল্লাহ জানান, আমি চাল পেয়েছি তবে ২০ কেজি নয় মাপার পরে হয়েছে ১৪ কেজি। ১৪ কেজি চালে কি সংসার চলে ? অন্য কিছু লাগে না ? ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়েই মাছ ধরতে যাই।

রাজবাড়ী জেলা মৎস কর্মকর্তা মজিনুর রহমান বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে  ইলিশ ধরায় নিশেধাজ্ঞা থাকায় নিয়মিত পদ্মা  নদীতে অভিযান চালানো হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রবিবার পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ৩৭৭ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড  প্রদান করা হয়েছে। জব্দ করা হয়ে ১৮ লক্ষ ৭৭ হাজার মিটার কারেন্ট জাল যা আগুনে পুরিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। জেলেদের প্রনোদনার বিষয়ে এই কর্মকর্তা আরো জানান, এ বছর রাজবাড়ী জেলার কার্ডধারী ৪৬৪০ জন জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে যাদের  কার্ড নেই তাদের কোন  সহযোগিতা করা সম্ভব হয়নি।