Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

কর্ণফুলী হ্রদ পরিচালনা উপদেষ্টা কমিটির সভা

দুষণের কবল থেকে কাপ্তাই লেককে রক্ষা করতে হবে : বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম

দুষণের কবল থেকে কাপ্তাই লেককে রক্ষা করতে হবে : বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মৎস্য প্রজাতিসহ আশপাশের এলাকায় ঘর-বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া কচুরিপানা, শিল্প-কারখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও বাড়ি-ঘরের বর্জ্য ফেলার কারণে কাপ্তাই লেক দুষিত হচ্ছে। হারাতে বসেছে লেকের নাব্যতা ও ঐতিহ্য। কচুরিপানা পরিস্কারের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের একটি হারভেস্টার মেশিন থাকলেও কাপ্তাই বিদ্যুৎ বিভাগ সেটি নিয়মিত ব্যবহার না করায় লেকের কাপ্তাই সদর এলাকা ছাড়া অন্যান্য স্থানে কচুরিপানার জট বেঁধেছে। কচুরিপানার কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে কাপ্তাই টু রাঙামাটি লেকে বেড়াতে গিয়ে কচুরিপানার জটে পড়ছে। ফলে তারা আনন্দ বিমুখ হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের দায়িত্বে রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এখানকার বিদ্যুৎ বিভাগে ৪৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকা সত্ত্বেও লেকের নাব্যতা রক্ষায় তাদের তেমন আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না। অথচ প্রযুক্তির কারণে কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।  আবার লেকের দু’পাড় ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিকে জানানো হবে। পাশাপাশি লেকে যারা মাছ ধরছে ও কৃত্রিমভাবে মৎস্য চাষ করতে গিয়ে লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং স্বাভাবিক মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত করছে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না। কাপ্তাই-রাঙামাটির পর্যটন স্পটের নান্দনিকতা, নৈসর্গিক স্থাপনা ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদেরকে ধরে রাখতে হবে। একই সাথে ড্রেজিংসহ লেকের পানি দুষণরোধে লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং লেকের পানি নিয়মিত পরীক্ষা করে  এতে দুষণের মাত্রা নির্ণয় করতে হবে। যেকোন মূল্যে দখল ও দুষণের কবল থেকে কাপ্তাই লেককে রক্ষা করতে হবে। 

শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত কর্ণফুলী হ্রদ (কাপ্তাই লেক) পরিচালনা উপদেষ্টা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস সভার আয়োজন করেন। 

তিনি বলেন, কাপ্তাইস্থ কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় লেভেল মোতাবেক পানি ধারণ করে রাখার বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে কাজ করতে হবে। আমরা জলবিদ্যুৎ ও কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদনকে প্রাধান্য দেব। কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পানি ধারণ করে রাখার কারণে আশপাশের এলাকার ঘর-বাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে নজর রেখে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কাপ্তাই লেক হুমকির মুখে থাকবে তা আমরা কখনো কামনা করি না। কাপ্তাই বাঁধ ও লেক রক্ষার মূল দায়িত্ব যাদের  তাদেরকে এসব বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। অতি শীঘ্রই রাঙামাটি হয়ে কাপ্তাই লেক পরিদর্শনের ঘোষণা দেন বিভাগীয় কমিশনার।  

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি), এ কে এম মামুনুর রশিদ (রাঙামাটি), মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), কর্ণফুলী পার্বত্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, চট্টগ্রাম বন্দরের হাইড্রোগ্রাফার মো. সামসুল আরেফিন, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলী কানাই চন্দ্র দাশ, নির্বাহী প্রকৌশলী (পিজিসিবি) নুর উদ্দিন মোহাম্মদ ফরহাদ চৌধুরী, রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল চাকমা, রাঙামাটি সার্কেলের উপ-বন সংরক্ষক মো. মাকসুদ আলম, খাগড়াছড়ি হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ প্রীতি চাকমা ও খাগড়াছড়ি ইউপি ফোরামের আহ্বায়ক চেয়ারম্যান হিরন জয় ত্রিপুরা। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে কর্ণফুলী হ্রদ (কাপ্তাই লেক) সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অভিষেক দাশ।