Opu Hasnat

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

ইউরোপে যে কারণে অভিবাসীদের প্রকৃত বন্ধু ‘আয়েবা’ প্রবাস

ইউরোপে যে কারণে অভিবাসীদের প্রকৃত বন্ধু ‘আয়েবা’

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ইউরোপে অভিবাসীদের দুর্দিনের শুরুটা প্রায় এক দশক আগে থেকে। অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তি আরব বসন্তের হাওয়া প্রভাব ফেলতে শুরু করে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর সমুদ্রসীমায়। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বারে বারে বিঘ্নিত হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ফলস্বরূপ ইমিগ্রেশন ইস্যুতে পুরনো আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দেশে দেশে প্রণিত হয় নতুন নতুন ‘কালাকানুন’।  এসব কালাকানুন বা কালো আইন যে শুধুমাত্র কালো মানুষদের জন্য তৈরী হয়েছে তা কিন্তু নয়। তারপরও অভিবাসীদের চলমান এই দুর্দিন সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করার রূপরেখা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে চলছে পর্যালোচনা।

সাংগঠনিক কর্মসূচী কিংবা রোডম্যাপ সকল দেশে এক হবে না এটাই স্বাভাবিক। ঠিক এই মুহূর্তে ইউরোপে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইতালিতে অতি সম্প্রতি কার্যকর হওয়া নয়া ইমিগ্রেশন আইন। রাজধানী রোম সহ বিভিন্ন শহরে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ইতোমধ্যে। নতুন আইনের প্রণেতা তথা ইতালীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি, যিনি একাধারে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী, তিনিও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যেকোন মূল্যে নতুন আইনের শতভাগ সুফল দেশের নাগরিকদের উপহার দিতে চান, যাদের ভোটে তারা এখন ক্ষমতায়। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি পরিষ্কারভাবে এটাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন সরকার পরিচালনা শুরুর পর থেকে গত চার মাসে যেভাবে এসেছে ধারাবাহিক সাফল্য। 

সীমান্ত সুরক্ষা এবং আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পৃথিবীর যে কোন দেশের জন্য ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’। ইতালিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্তে এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন সরকারের সংস্কার কর্মসূচীর প্রতি ইতালীয় জনগনের ব্যাপক সমর্থন থাকায় ২০১৮ সালের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটে যাবার কোন সম্ভাবনা বা সুযোগ একেবারেই নেই। যে আইনের কারণে আজ অভিবাসীদের দুর্দিন, সৃষ্টি হয়েছে সংকট, সরকারের ভাষ্য মতে সেই আইন কিন্তু তৈরী হয়েছে বৃহত্তর সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করতে। বাস্তবতার নিরিখে তাই চলমান যে কোন সংকটের সুরাহা হতে পারে একমাত্র আলোচনার টেবিলে। 

আলোচনার টেবিলে গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ প্রশস্ত করতে চায় ইউরোপে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ৩০টি দেশের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)। ইতালি সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদেরকে যে কোন উপায়ে বৈধতা পাবার সুযোগ করে দিতে সময়পোযোগি পদক্ষেপ নিয়েছে আয়েবা। প্রতিটি দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার পথ খোলা রাখতে ‘অবৈধ ইমিগ্রেশন’ তথা সাগরপথে অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে ১৩ অক্টোবর চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহি পরিষদের সভায়। 
আয়েবার মূলমন্ত্র ‘ইন্টিগ্রেশন’ থেকে অবৈধ ইমিগ্রেশনকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাগ মিটিংয়ের প্রধান অতিথি বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। 

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, সাগরপথে অবৈধ ইমিগ্রেশন নিরুৎসাহিত করা না গেলে শুধু ইতালি কেন, ইউরোপের যে কোন দেশে অবস্থানরত অবৈধ বা আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের ভাগ্য দিনে দিনে আরো অনিশ্চিত হবে। অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা) যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃক স্বীকৃত একটি ইউরোপীয় সংগঠন এবং ইমিগ্রেশন চ্যাপ্টারে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে বিগত দিনে আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধানের রেকর্ড যেহেতু আয়েবার রয়েছে, তাই যৌক্তিক কারণে ইতালী ইস্যুতেও সতর্কতার সাথে কৌশলী ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর আয়েবা।

রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে যেসব দেশে বৈধতার সুযোগ নেয়া যায়, সেসব দেশে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে দূতাবাসের মতো আয়েবারও রয়েছে বিশেষ সীমাবদ্ধতা। কিন্তু ইতালির প্রেক্ষাপট তা নয়। দেশটির রাজধানী রোমে আছে ‘মানবিকতার সূতিকাগার’ ভ্যাটিকান সিটি। দেশটিতে অপরাধপ্রবণ জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের কুখ্যাতি নেই, এটিও বেশ আশার কথা। বাংলাদেশিরা সৎ এবং কর্মঠ এটা বেশ ভালো জানেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি। ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের গুডউইল কাজে লাগিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আয়েবা যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা থেকে। দুর্দিনে তাই কবির ভাষায় হোক না বলা, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।