Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ঝালকাঠি কৃষি বিভাগের উদ্যোগ ৮৪ টি ভাসমান সবজি ক্ষেত কৃষি সংবাদঝালকাঠি

ঝালকাঠি কৃষি বিভাগের উদ্যোগ ৮৪ টি ভাসমান সবজি ক্ষেত

ভাসমান কচুরিপানা পানিতে ভেসে থাকে প্রায় বছরব্যাপী। সাধারণভাবে কচুরিপানা বহুমাত্রিক অসুবিধার কারণ। এ জঞ্জাল কচুরিপানাকে তারা ধাপে ধাপে কাজে লাগাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে পরিকল্পনা করে কৃষকরা। তারপর সেসব ধাপের উপর টেপাপানা দিয়ে তৈরি করে শাক-সবজির ভাসমান বীজতলা। এভাবে ভাসমান ধাপের উপরে বীজতলা করে ঝালকাঠির কৃষকরা। পরে তাতে সবজির বীজ থেকে চারা ফুটিয়ে এখন শাক-সবজির ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। ঝালকাঠি জেলায় কৃষি বিভাগের কর্মসূচীর আলোকে ভাসমান শাক-সবজি ক্ষেত রয়েছে ৬০টি, প্রকল্পভিত্তিক রয়েছে ২০ টি ও উদ্ভুদ্ধকরণ রয়েছে ৪টি বীজ তলা। জেলায় মোট ৮৪টি বীজ তলার মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ জন কৃষকের ১৮টি, নলছিটিতে ১২ জন কৃষকের ৪২ টি, রাজাপুরে ৩ জন কৃষকের ১২ টি এবং কাঠালিয়ায় ৩ জন কৃষকের ১২ টি আমন বীজতলা রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ জালাল এ তথ্য জানিয়েছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, কচুরিপানা দিয়ে স্তুপ তৈরী করে ১ মিটার পুরো, ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও সোয়া মিটার প্রস্থ করে ধাপ তৈরী করে কৃষকরা। বিভিন্ন রকম সবজির দৌলা দিয়ে কৃষকরা তাদের ভাসমান বীজতলা মনের মাধুরি দিয়ে সাজিয়ে নিবে নান্দনিকভাবে। কৃষকের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কোনোটায় পেঁপে, লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি আবার অন্যগুলো টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি, শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বা সাদা শাক চাষ করছে।  

ঝালকাঠির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিকা বিশ্বাস জানান, ‘বন্যা এলাকার কৃষকেরা যেন রোপা আমনের চাষ করতে পারে, এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সেসব জায়গায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নিজেদের উদ্যোগে কলাগাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছে।’ ইতোমধ্যেই ঝালকাঠির চার উপজেলায় ৮৪টি স্থানে ভাসমান সবজি ক্ষেত থেকে সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।

রাজাপুরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিবছরই বন্যা, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। তাই যথাসময়ে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব হচ্ছে। একই সঙ্গে ফসলের ঘাটতি হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরী করতে গতবছরই কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। অতিবৃষ্টির কারণে বীজতলার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার ৮৪ টি স্থানে ভাসমান বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অনেক বীজতলা ও ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কৃষকেরা কলাগাছের ভেলায় তৈরী সবজির বীজতলার উপকার ভোগ করেছেন। নিচু এলাকায় পানি না নামায় বীজতলার জন্য কলাগাছ দিয়ে ১০ মিটারের ভেলা বানানো হয়েছে। এর প্রস্থ দেড় মিটার। কচুরিপানা বিছিয়ে ভেলার ওপর কাদামাটি দিয়ে বীজ ফেলা হয়েছে। 

রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোজিৎ কুমার মিত্র জানান, একেকটি ভাসমান বীজতলায় এক কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটানো হয়েছে। তাতে যে চারা জন্মেছে, তা এক বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। পানির উপর ভাসমান থাকার কারণে এরূপ বীজতলায় পানি সেচের দরকার হয় না। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বীজতলা তৈরির মৌসুম শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে রোপা আমনের চারা রোপণ করা যায়। নলছিটি উপজেলার প্রতাপ গ্রামের কৃষক আঃ লতিফ জানান, মার্চ মাসের শেষ দিকে অতিবৃষ্টির কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আরও দুই দফা টানা বৃষ্টির কারনে আউশ ধানও নষ্ট হয়ে যায়। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে। তবে বঙ্গোপসাগর তীরের নিচু এলাকা থেকে পানি নামতে আরো বেশি দেরী হয়। মধ্য জুলাই থেকে বিভিন্ন উঁচু এলাকায় রোপা আমনের বীজতলা তৈরি শুরু হয়ে গেছে। নিচু এলাকায় পানি নামার পর যাতে দ্রুত চারা রোপণ করা সম্ভব হয়, সে জন্য ভাসমান বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা নেন কৃষি কর্মকর্তারা। 

কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘সাত বিঘায় বোরো করছিলাম। সব পানিতে খাইয়া হালাইছে। ক্ষতির শেষ নাই। অ্যাহন আকাশে মেঘ দেখলে ডর লাগে। এরপরও ভেলায় আমনোর বীজতলা হরছি। হেই বীজ তলায়ই আবার শীতকালীন সবজি রোপণ করেছি। এখন সেখানে অনেক পরিমাণ শাক-সবজি উৎপাদন হয়েছে।’

কৃষকরা জানান, এসব ভাসমান বীজতলাগুলো যাতে ভেসে না যায়, সেজন্য শক্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। শুকনো মৌসুমে পানি সরে গেলে সেসব কচুরিপানার ধাপ জমিতে মিশে জৈব পদার্থের অতিরিক্ত জোগান দেয়। জমি হয় উর্বর। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা তৈরীর পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে জৈবিক প্রক্রিয়ায় বীজতলা তৈরী করে সময়োপযোগী বীজ, চারা ও শাক-সবজি উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।