দৌলতদিয়ায় চার কিলোমিটার এলাকায় জানবাহনের সারি রাজবাড়ী / 
পদ্মায় তীব্র স্রোতের, ফেরি সংকট ও কাঠালবাড়ি শিমুলিয়া নৌরুটে নাব্য সংকটের কারনে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের ব্যাস্ততম দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে অব্যহত ভাবে নদী পারের অপেক্ষমান যানবাহনের দীর্ঘ সারি থাকছে।
এ পরিস্থিতি মঙ্গলবার সকাল থেকে আরো ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ঘাট থেকে মাত্র ৭/৮ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে যানবাহনগুলোকে সিরিয়ালে আটক থাকতে হচ্ছে ৭/৮ ঘন্টারও বেশী সময়।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, নদীতে তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি সোমবার থেকে রোরো (বড়) ফেরি কেরামত আলী, মঙ্গলবার সকাল থেকে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধা যান্ত্রিক ত্রæটিতে বিকল হয়ে আছে। এছাড়া নদীতে ড্রেজিং করার কারণে ১ নং ফেরি ঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে এবং ২ নং ফেরি ঘাটে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি ভিরতে পারছে না। অপর তিনটি ফেরি ঘাট সচল রয়েছে। অপরদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল কখনো ব্যহত আবার কখনো পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ওই রুট দিয়ে পারাপার হওয়া যানবাহনগুলে নদী পাড়ি দিতে এই রুটে আসছে। এতেকরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহনের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। সব কিছু মিলিয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের প্রায় গোয়ালন্দ ফিডমিল পর্যন্ত অন্তত চার কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। প্রথম দিকের ফোরলেন সড়কের বাম পাশে পন্যবাহি ট্রাক ও ডান পাশে যাত্রীবাহি বাস ও পচনশীল পন্যবাহি ট্রাকের সারি দৌলতদিয়া ক্যানেল ঘাট পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার। এরপর থেকে এক লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সাধারন পন্যবাহি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এরমধ্যে অনেক ট্রাক আছে যারা দুইদিন আগে ঘাটে এসে আজও ফেরি নাগল পায়নি।
তবে নদী পার হতে আসা এসি বাসগুলো ডান পাশ দিয়ে দৌলতদিয়া বাইপাস সড়ক দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ও ব্যাক্তিগত গাড়ির সাথে সরাসরি ফেরি ঘাটে চলে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে এসি বাসগুলো অবৈধ ভাবে সরাসরি ফেরিঘাটে চলে যাচ্ছে।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা পূর্বাশা পরিবহনের যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ভোরে তাদের বাসটি ছেড়ে এসে সকাল ৯ টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটের অন্যান্য যানবাহনের সাথে সিরিয়ালে আটকা পরে। এখন বেলা আড়াইটা বাজে এখনো ফেরি ঘাটে পৌঁছাতে পারিনি। কখন পৌঁছাবো জানি না। মাত্র ৭/৮ মিনিটে পথ ৭/৮ ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে। তীব্র গরমে বাসের যাত্রীদের অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, দেশ এগিয়েছে, কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটের দূর্ভোগের চিত্র একই রয়েই গেছে।
একে ট্রভেলস পরিবহনের যাত্রী আনোয়ার হোসেন, মোয়াজ্জেমুল হকসহ অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেন, আমরা তীব্র গরমের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে থেকে কষ্ট করছি, অথচ এসি পরিবহনগুলো ডান পাশ দিয়ে ঘাটে চলে যাচ্ছে। এ অনৈতিক কাজ মেনে নেয়া তাদের জন্য আরো কষ্টকর। দৌলতদিয়া ঘাটে বিভিন্ন অনিয়ম গুলোই যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়ায় সিরিয়ালে যানবাহন আটক পড়ছে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় প্রতিটি ফেরির ট্রিপে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সময় লাগছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে মঙ্গলবার ১৫ টি ফেরি যানবাহন পারাপার করছে। যে দুটি ফেরি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে মেরামত করা হচ্ছে তার মধ্যে ইউটিলিটি ফেরি রজনীগন্ধার মেরামতের কাজ আজই শেষ করে ফেরি বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।