Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

মুন্সীগঞ্জ এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের দখলে মুন্সিগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জ এখন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের দখলে

মুন্সীগঞ্জ জেলার শহর ও শহরতলির সর্বত্র যত্র-তত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ছোট-ছোট কারখানায় পুলিশ-প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়ে তাদের নাকের ডগায় অবৈধভাবে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকসহ ইঞ্জিন চালিত নসিমন-করিমন নামের অবৈধ যানবাহন তৈরির রমরমা ব্যবসা। 

জেলা শহর সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো লাইসেন্স ছাড়া কাউকেই তোয়াক্কা না করে দিব্বি জেলা শহরগুলোকে দখল করে রেখেছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক। 

জেলা শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে গড়ে উঠেছে ইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন, ও ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান ও মিশুক। শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জ ও মীরকাদিম পৌরসভাতেই এসব অবৈধ যানবাহন তৈরীর প্রায় ৫ শতাধীকের উপরে অবৈধ কারখানা, অটোগাড়ি রাখা ও ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ রয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইন শৃংখলা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এই সমস্ত অবৈধ গ্যারেজ-কারখানায় নসিমন, করিমন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের রমরমা ব্যবসা চলছে। 

মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসকল কারখানার মালিক হয়ে রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু শহরেই নয় মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলা সহ ৬টি উপজেলায় শহশ্রাধীক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক বেপোরোয়া ভাবে চলার কারণে স্কুল-কলেজে পরুয়া শিক্ষার্থীরা রাস্তা পাড় হতে গিয়ে প্রতিদিন নানা ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। 

তবে মালিক পক্ষ অনেক বেশি প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কিছুদিন পর পর মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের কারখানায় অবৈধ যান তৈরির রামরাজত্ব চালাতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ এধরনের কারখানায় অবৈধ স্যালো ইঞ্জিন চালিত যানবাহন তৈরীর নেই কোনো বৈধ সরকারি অনুমতিপত্র। 

এদিকে গড়ে উঠা এসব অবৈধ গ্যারেজ ও কারখানাগুলো পুলিশ-প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। জেলার সচেতন মহল ও ভুক্তভুগী এলাকাবাসীর জোর দাবী, এসব কারখানাগুলোকে চিন্হিত করে জেলা প্রশাসনের তদারকিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করাসহ কারখানা মালিকদের জেল জরিমানা ব্যবস্থা করা উচিৎ।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় শহরের উত্তর ইসলামপুরে রয়েছে অর্ধশতাধীক গ্যারেজ, দক্ষিন ইসলামপুরেও তাই। শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যাান্ডে প্রকাশ্যে রয়েছে ২০টি অটো তৈরীর কারখানা।

মীরকাদিম পৌরসভার সিপাহিপাড়া, গোয়ালঘুন্নিসহ গোটা জেলার এলাকায় রয়েছে প্রায় শহশ্রাধীক অটোরিকশা, মিশুকের ওয়ার্কসপ সহ অনেক ছোট-বড় বেশ কয়েকটি অবৈধ স্যালো ইঞ্জিন চালিত কারখানা। এসকল কারখানায় সরকারী কোনো অনুমতি ছাড়াই দিনরাত চলেছে ইঞ্জিনভ্যান তৈরির কাজ। 

এদিকে, প্রতিদিন রাতে চলে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও মিশুকের অবৈধ ভাবে বিদ্যুতের চার্জ।

এসব অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দিতে রয়েছে প্রতিটি উপজেলার পল্লিবিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। 

মুলত জেলা শহরের পল্লি বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ও পল্লী বিদ্যুতের হেড অফিসের স্থানীয় এলাকার প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধীক টাকা। 

এই টাকা আবার পল্লি বিদ্যুত অফিসের বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে গিয়ে বর্তমানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বণে গেছে। এতে করে সরকার একদিকে যেমন বিপুল অঙ্কের টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাপক শব্দ দুষণে পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট। 

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ পল্লি বিদ্যুতের সদর জোনাল অফিসের ডিজিএম শফিউল আলম বিদ্যুতের এসব অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা একটি চৌকস সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর তদারকি করছি। আশা করি অচিরেই বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগকারিদের হাতে নাতে ধরে আইনের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।

কারখানার এক শ্রমিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, আমরা প্রশাসনসহ সবাইকে টাকা দিই। ফলে এটা পত্রিকায় লিখে কোন কিছুই হবে না। আমাদের কাজ চলবেই। কেমন লাভ হয় জিজ্ঞেস করলে জানায়, আমরা মাসে ৩০ থেকে ৩৫টি ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান, নসিমন, করিমন, তৈরী করে থাকি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, একটি ইঞ্জিনভ্যান তৈরি করতে সকল খরচ বাদে মালিকের লাভ হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। 

শহরের এত কাছাকাছি সরকারের অনুমতি ছাড়াই এসব অবৈধ নসিমন, করিমন, ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারি চালিত অটো ভ্যান তৈরি হলেও পুলিশ প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। 

তবে এ সব অবৈধ কারখানায় দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা।

আর এ কারনে প্রতিনিয়ত মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফলে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য পথচারীসহ সব বয়সী মানুষ। এ সকল অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটেগাড়ি, স্যালো ইঞ্জিন চালিত গাড়িগুলোর নেই কোনো হর্ন, নেই ব্রেক ও গিয়ার। 

মুলত তাদের নেই কোন ট্রেনিং। তাছাড়া অবৈধ ইঞ্জিন ভ্যান, নছিমন, করিমন, আলমসাধু, লটাহাম্বার, ব্যাটারি চালিত আটো ভ্যানের চালকরা অধিকাংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু ও অদক্ষ চালক। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এসব অবৈধ যান তৈরি ও চলাচলে বিধি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা না দেখার ভান করে রমরমা ভাবে চালাতে সাহায্য করছে অবৈধ যান তৈরির কারখানা।
 
অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, এসব অবৈধ যান তৈরিরকারখানা বন্ধসহ অনতি বিলম্বে সড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা না হলে দুর্ঘটনার পরিমান বেড়েই চলবে। এর ফলে পাল্লা দিয়ে অকালে পথচারীদের প্রাণ হানি বেড়েই চলবে। 

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ মোবরক উল্লাহ জানান, জেলার শহশ্রাধীক ব্যাটারি চালিত অটোগাড়ি অবৈধভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করে চার্জ করছে তা আমি ব্যক্তিগত ভাবে অবগত। এবং এতে আমাদেও বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সরাসরি মাসোয়ারা নিয়ে লাখোপতি বনে যাচ্ছে সে বিষয়ে সেসব অসাধু গ্যারেজ মালিক ও বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তাদের তাদের হাতে নাতে ধরতে আমরা সিভিলে লোক নিয়োগ করেছি। এ ব্যপাওে কেও রক্ষা পাবে না।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব জানান, ব্যটারি চালিত এসব অটোগাড়ি ও মিশুকের কারনে স্কুল-কলেজে পরুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরসহ সাধারন মানুষ এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। কারন প্রতিদিনই এসব অটোগাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন তারা। আমি পৌর মেয়র হয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ও জেলা পুলিশ সুপারসহ গন্যমান্য সুশিল সমাজের মানুষকে নিয়ে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। 

এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভুমি) মুনতাসির জাহান বলেন, মুন্সীগঞ্জের সর্বত্র এখন ব্যটারি চালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিন চালিত থ্রি-হুইলার কোন যানবাহন মহাসড়কে চলার কোন অনুমতি নেই । এগুলো এভাবে তৈরী করার কোন নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ এর বিরুদ্ধে অবশ্যই মোবাইল কোর্ট মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।