Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

মুন্সীগঞ্জে আইজিপি’র আগমন উপলক্ষে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশঙ্কা! মুন্সিগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে আইজিপি’র আগমন উপলক্ষে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশঙ্কা!

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটেয়ারীর মুন্সীগঞ্জে আগমনকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকার পর আবারো জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র-শিবির নেতাকর্মীরা গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালানোর প্রস্তুুতি হিসেবে এ গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মুন্সীগঞ্জের নির্ভরযোগ্য একাধীক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। 

জেলার একাধীক গোয়েন্দা সংস্থা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটেয়ারীর মুন্সীগঞ্জে আগমনকে কেন্দ্র করার দিনক্ষনকে সামনে রেখে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে এবার রাজধানী ঢাকা-বাংলাদেশ সহ মুন্সীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে। এ কারনে তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী হয়েছে। আর তাদের অবস্থান নিরাপদ রাখতে ও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে অন্ধকারে রেখে জামায়াত নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে মুন্সীগঞ্জে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। 

এরই অংশ হিসেবে জামায়াত নেতাকর্মীরা ঢাকার পাশের জেলা নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশ এলাকায় জড়ো হয়ে গোপনে মিটিং-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। 

এদের মধ্যে জামায়াতের নারি সদস্যরাও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মিটিং-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। 

অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ জেলার সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহম্মদ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মুন্সীগঞ্জ পুলিশ জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র-শিবিরের গোপন তৎপরতা ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জেলার পুলিশ-প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে জামায়াত নেতাকর্মীরা অন্য জেলা থেকে আসার কারণে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পুলিশের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের উর্দ্ধতন একাধীক কর্তা ব্যাক্তিদের অভিমত। 

এ বিষয়টিকে মুখ্য রেখে জেলা নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটি একাধিক সভা-সমাবেশ ও আলোচনা করছেন।

জেলার গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইও (১), ডিএসবি মুন্সীগঞ্জের নজরুল ইসলাম জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলাটি রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা হওয়ার কারণে ও বিএনপির অধ্যুষিত-ঘাটি হিসেবে পরিচিত হওয়ার দরুন এ জেলাটিকে নিরাপদ ভেবে সাম্প্রতিক সময়ে অন্য জেলা থেকে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের অনেক নেতাকর্মীদের মুন্সীগঞ্জে আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তারা মুন্সীগঞ্জে থাকা দলীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। অন্যদিকে তাদের গোপন তৎপরতা ও অবস্থান নিরাপদ রাখতে তারা ঘন-ঘন স্থান পরিবর্তন করছে। আবার মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে থাকা মসজিদ-মাদ্রাসা গুলোতে তাবলিগ জামায়াতের লেভাস ধরে-সেজে ও বিভিন্ন কৌশলে অবস্থান করছে নাশকতা করার লক্ষে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে আরো জানা গেছে যে, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অন্যান্য জেলা থেকে আগত নিত্য-নতুন মুখের মানুষদের পদচারনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরাও জামায়াত শিবিরের এভাবে গোপনভাবে আনা-গোনা তৎপরতার কিছুটা আভাস পেয়েছেন। 

তবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটেয়ারীর মুন্সীগঞ্জে আগমনকে কেন্দ্র করে নাশকতামূলক কর্মকান্ড যেন চালাতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসন সম্পুর্ন সোচ্চার রয়েছে বলে জানান, জেলার গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইও (১), ডিএসবি মুন্সীগঞ্জের নজরুল ইসলাম জানান। 

ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানী ঢাকায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় থেকে। তারা অপরাধ কর্মকান্ড সংঘটিত করে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে মুন্সীগঞ্জে চলে আসে। এ জেলায় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করেন জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র-শিবিরের নেতাকর্মীরা। 

গোয়েন্দাদের জড়িপের তথ্য মতে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৫ শতাধিক জামায়াত ইসলামীর রোকন সদস্য ও ছাত্র শিবিরের সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে। 

তাদের মধ্যে ৯০ ভাগ সদস্যদের বাড়ি দেশের অন্যান্য জেলায়। তারা দীর্ঘদিন ধরে মুন্সীগঞ্জে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে গোপনে দলীয় কর্মকান্ড নির্বিগ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। 

জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে ঘনঘন অবস্থান বা ভাড়া বাসা পরিবর্তন করায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দাদের সূত্রটি আরও জানায়, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতার খবর জানতে কাজ করছেন জামায়াত শিবিরের একাধিক নেতাকর্মী। তারা বিভিন্ন কৌশলে ও বিভিন্ন ছদ্ববেশ ধারণ করে পুলিশ-প্রশাসন পাড়ায় ঘুরে বেড়ায় এবং আন্তরিক সর্ম্পক তৈরী করে কৌশলে সরকারি পরিকল্পনা ও তথ্য সংগ্রহ করে নিচ্ছেন। বর্তমানেও এই অপতৎপরতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সম্প্রতি জেলা শহরের মানিকপুর এলাকার নিজ বাড়িতে জামায়াত শিবির কর্মীদের ঘাটি বানিয়ে প্রায় রাতেই ভুড়ি ভোজের আয়োজন করে সরকার বিরোধী তৎপরতা ও ণাশকতা চালাতে গোপন বৈঠক অব্যাহত রেখেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার জামায়াত ইসলামীর এক সক্রিয় রোকন সদস্য জানান, মুন্সীগঞ্জে স্থানীয় শক্তিশালী সেন্টার না থাকায় জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের অন্য জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা কোন কর্মকান্ড চালাতে পারছে না। পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপির সরকার বিরোধী দুর্বল আন্দোলন ও নিস্ক্রিয়তাও হচ্ছে এর অন্যতম একটি কারন। 

বিএনপি সক্রিয় ভাবে রাজপথে থাকলে জামায়াত শিবির কর্মীরাও তাতে যুক্ত হতো। এসব প্রতিবন্ধকতার কারনে প্রকাশ্যে আন্দোলনের পরিবর্তে কৌশল পরিবর্তন করে তাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশিত সকল কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। 

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, বহিরাগত জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা  মুন্সীগঞ্জ শহরসহ শহরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নানা নামে কির্ন্ডার গার্টেন স্কুল, মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা, কোচিং সেন্টার, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার খুলে দলীয় কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। 

শহরের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ইসলামীর অর্থায়নে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে নানা ধরনের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর এ ব্যবসায় প্রতিমাসে লাভের একটি অংশ জমা হচ্ছে দলীয় তহবিলে। 

অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে জেলার মিরকাদিম পৌরসভায় অবস্থিত মুন্সীগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্ট্রিটিউটে ছাত্র শিবির নেতাকর্মীদের অপতৎপরতার খবর আলোচনায় চলে এসেছে। ছাত্র শিবিরের অর্ধশতাধিক বহিরাগত শিক্ষার্থীরা মিরকাদিম পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লায় ভাড়া বাসা করে ম্যাচ সিস্টেমে বসবাস করে সরকার বিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাত্র শিবির নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরী করে তা পুলিশের কাছে দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম ও সদর থানার ওসি আলমগীর এ প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে রাজী না হলেও মুন্সীগঞ্জ জেলার সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহম্মদ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার ছয় থানার কোথাও কোন নাশকতা না হয় সে ব্যপারে জামায়াত-শিবিরের প্রতি দৃষ্টি রাখতে জেলার ৬ থার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

তার পরও বিচ্ছিন্নভাবে-গোপনে তারা তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পারে। জামায়াত-শিবির কর্মীরা যেন মুন্সীগঞ্জে পরিকল্পনা করে রাজধানী ঢাকাসহ কোন জেলা-উপজেলায় নাশকতা কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে বিষয়ে জেলার সদরসহ ৬ থানার ‘ওসি’ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জোরালো নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) কাউসার আলম ও (টিআই) কামরুল বেগ বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটেয়ারীর মুন্সীগঞ্জে আগমনকে কেন্দ্র করে সকল ট্রাফিক ব্যবস্থা ও সড়ক নিরাপত্তার বলয় তৈরী করেছি।

অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ মুক্তারপুর নৌ-পুলিশ পরিদর্শন ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটেয়ারীর মুন্সীগঞ্জে আগমন উপলক্ষে ধলেশ্বরী, শিতলক্ষা, মেঘনা নদী সম্পুর্ন সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-(ওসি) আলমগীর জানান, জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের নাশকতামূলক ঠেকাতে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। 

পাশাপাশি জেলার গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইও (১), ডিএসবি মুন্সীগঞ্জের নজরুল ইসলাম জানান, মুন্সীগঞ্জে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র-শিবির নেতাকর্মীরা গোপন তৎপরতার ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালানোর প্রস্তুুতির বিরুদ্ধে জেলায় পুলিশ সদস্যরা পুরো জেলাকে পর্যবেক্ষনে রেখেছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ-প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরো বেশি  তৎপর হয়ে উঠেছে।