ভাঙ্গনে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লা পারে এখন শুধুই কান্না রাজবাড়ী / 
পদ্মা নদী বেষ্টিত এক জনপদ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ। এ জনপদে প্রমত্তা পদ্মা দিয়েছে যেমন আবার নিচ্ছেও তেমন। পদ্মা নদী একদিকে যেমন দিয়েছে অনেক, আবার কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আহাজারিতে আবার ভারি হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়। ভাঙনের তীব্রতা কয়েকদিন কম থাকলেও গত দুই দিন ধরে তা আবার আগ্রাসী হয়ে গ্রাস করেছে শত শত বিঘা ফসলী জমি, বাড়ি-ঘর ও মসজিদ।
জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ মাসের শুরুর দিকে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে পদ্মা পাড়। গত সপ্তাহ খানেক ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা কম হলেও গত দুইদিন ধরে অতিমাত্রায় ভাঙনে পদ্মা পাড়ের মানুষের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পর দৌলতদিয়ায় ব্যাপক ভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে এ মাসে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙনে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙন আতঙ্কে নদীতীরে বসবাস করছে অন্তত ২ হাজার পরিবার। বুধবার সরেজমিন দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া গ্রামে দেখা যায়, যেখানে গত কালও ছিল বাড়ি ঘর ও মসজিদ, আজ সেখানে পদ্মার তীব্র স্রোতের গর্জন। অনেকে তাঁদের বাড়িঘর দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছেন। নদীর কাছে অধিকাংশ বসতভিটা শূন্য পড়ে আছে।
এসময় স্থানীয় রোকন মুন্সির স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৪৫) হতাশা নিয়ে জানান, তাদের প্রায় ১০ বিঘা জমি ছিল, ২টা টিনের ঘর ছিল, তা সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পাশ্ববর্তী নাসির সরদারপাড়ায় অন্যের জমিতে আপাতত ঘর নিয়ে রাখছেন।
এদিকে গোয়ালন্দে নদী ভাঙন সরেজমিন দেখতে আসনে ঢাকা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. নুরুন্নবী। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু নাসার উদ্দিনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বৃন্দ।
এসময় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, ভাঙন প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তড়িত পদক্ষেপের কারণে ভাঙনের ভয়াবহতা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে পদ্মাতীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে প্রায় ১৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত ত্রান হিসেবে শুকনো খাবার, চাল ও ঢেউটিন বিতরন করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. নুরুন্নবী জানান, পদ্মাতীরের বসতিদের রক্ষায় নদী শাসন খুবই জরুরী। তবে নদী শাসন অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প। তারপরও রাজবাড়ী জেলাকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ প্রকল্প গ্রহন করা জরুরী। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে নদী ভাঙনের ভয়বহতা সম্পর্কে অবগত করব।