Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সনৎ বসু’র অণুগল্প ‘ব্রিজটা ভেঙে পড়লো’ শিল্প ও সাহিত্য

সনৎ বসু’র অণুগল্প ‘ব্রিজটা ভেঙে পড়লো’

ব্রিজটা ভেঙে পড়লো ৷ সুধীর্ঘ ব্রিজ, পুরনো ৷ দক্ষিন কলকাতার এক অংশের লাইফলাইন৷
উপরে তখন কত গাড়ি,  উঠছে নামছে ৷
নীচে চালু রেললাইন,  খাল,  খালঘেঁষে মেট্রোর ঠিকা মজুরদের ঝুপরি ৷
বিকট আওয়াজে ছুটে এল হতচকিত মানুষ ৷ উদ্ধারে হাত লাগালো ৷ চারপাশে আতঙ্ক, কান্না, আর্তনাদ ৷
ততক্ষণে খবর ভাইরাল ৷ টিভি ইন্টারনেট সোস্যালমিডিয়া মাল্টিমিড়িয়া ৷
পাবলিকের প্রশ্ন  আবার কোন ব্রিজ?  কোথায় ভাঙলো, কতজন মরেছে?
ছুটে গেলেন মন্ত্রী মেয়র পুলিশ ৷ হাসপাতাল এমারজেন্সী প্রস্তুত ৷
 বেলা পড়তেই শুরু চ্যানেলের চিৎকার ৷ সঞ্চালকের আবেগজড়িত কন্ঠ ৷ টি আর পি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা ৷
সরকার এবং বিরোধীরাও অকুস্হলে ৷ শুরু বাকযুদ্ধ ৷
কার ভুলে,  কারা দায়ী? 
মেট্রোরেল না পুর্তদপ্তর?
সন্ধে থেকে যুদ্ধ ছড়ায় চ্যানেলে ৷
ঘন্টাখানেক সংগে কূজন ৷
একদিকে সরকার সমর্থক শিক্ষক অধ্যাপক,  অন্যপক্ষেও অধ্যক্ষ অধ্যাপক ৷ এককথায় জ্ঞাণ বিতরণ পর্ব ৷
ততক্ষনে খবর বেহালার তরতাজা যুবক সৌভিক বাগ মৃত ৷ হাসিখুশি বইপাগল ৷ বই কিনে ফেরার পথে বাসসমেত ব্রিজের তলায় ৷
ইতোমধ্যে পৌঁছেছে এন ডি আর এফ, সেনা, ফায়ারব্রিগেড আরো অনেকে৷ 
উদ্ধারকাজ জারী ৷
চ্যানেলে তখন তুমুল বিতন্ডা ৷ কারা দায়ী ৷ নীলসাদা রঙ না নোটবন্দী ৷ টেন্ডার বখড়া না জিএসটি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর তামাশা না প্রধানমন্ত্রীর অচ্ছেদিনের চমক ৷
জ্ঞাণী অধ্যাপক তখন ব্রিজ ভাঙা নিয়ে বিদেশি দার্শনিকের ব্যাখ্যা বোঝাতে হিমশিম ৷
রাত দুটোয় উদ্ধার  আরেকজন ৷ মুর্শিদাবাদের অলোক মন্ডল ৷ কদিন বাদেই দেশে ফেরার কথা ছিল ৷ বিয়ে ঠিক পাশের গ্রামের  ঝিনুকের সাথে ৷
এখন লাশটা হাসপাতালের মর্গে ৷
অষ্টাদশী ঝিনুক কিছুই জানে না ৷ গরিব ক্ষেতমজুরকন্যা তার আগামী জীবন নিয়ে সুখস্বপ্নে বিভোর ৷
মৃত ও জীবন্মৃত সৌভিক ঝিনুকদের নিয়ে কি কোনদিন 
একটা ঘন্টাখানেক সংগে কূজন হবে ৷
তাদের পরিবারের ক্ষতির ভাগীদার কে হবে?
পাচঁলাখই কি সমাধান! 
আপনারা কি বলেন!!