রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতা এওয়ার্ড পেলেন সৈয়দপুরের মাহি নীলফামারী / 
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মুক্তি আকা খাতুন (মাহি) এবার রংপুর বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা এওয়ার্ড পেয়েছেন। জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীদের উৎসাহ স্বরুপ রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতার সনদ ও এওয়ার্ড লাভ করেন মাহি। গত বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) রংপুর আরডিআরএস অফিসে বিভাগীয় পর্যায়ে ৪০ সফল নারীকে সম্মাননা স্বরুপ সনদ ও ক্রেষ্ট প্রদান করেছে বাংলাদেশ মহিলা অধিদপ্তর ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের মুক্তি আকা খাতুন মাহি অন্যতম। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ২০১৭তেও মাহি সৈয়দপুর উপজেলা ও নীলফামারী জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জয়িতার ২টি এওয়ার্ড লাভ করেছিলেন। এবার জয় করলেন বিভাগীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ জয়িতার এওয়ার্ড।
রংপুর বিভাগীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জনাব কাজী হাসান আহমেদ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে মাহির হাতে সফলতা স্বরুপ ওই সম্মাননা সদনপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এছাড়া রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জনাব মিনু শীল এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা প্রশাসক জনাব এনামুল হাবীব, রংপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব জনাব শাহনওয়াজ দিলরুবা খান প্রমুখ।
সৈয়দপুরের সফল একজন নারীর নাম মুক্তি আকা খাতুন (মাহি)। যিনি জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে করেছেন অবিরাম কঠিন সংগ্রাম। হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যাওয়া মাহির জীবন শুরুতে মোটেই সুখর ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ও ভাইবোনসহ নিজের লেখাপড়ার জন্য প্রথমে মাহি সামান্য বেতনে চাকরী করেছেন ট্রাভেল এজেন্টে। সেই হাটি হাটি পা পা করে মাহি আজ সৈয়দপুরে গাউসিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। এ ক্ষেত্রে মাহি পেয়েছে ছোট ভাই মাহতাব কাদরীর সর্বাত্মক সহযোগিতা।
সৈয়দপুরে মাহিকে এখন সবাই জয়িতা বলে চেনে। শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার বসবাস এই জয়িতার। বাবা শাহনেওয়াজ ব্যবসা করে সংসার ও ভাইবোন সকলের লেখাপড়া চালাতেন। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও সুখের অভাব ছিলনা। ২০১২ সালে হঠৎ মাহির পিতা না ফেরার দেশে চলে যান। তখন মাহি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। কি করবে মাহি তখন কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। কিন্তু হারবার মেয়ে ছিল না মাহি। তাই পরিবারের ভরণ পোষন এবং ৯ ভাই বোনের লেখাপড়ার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রথমে চাকরী খুঁজতে থাকেন। চাকরী জোটে বিমানের একটি টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠানে। সেখানে একজন টিকিট বিক্রেতা হিসাবে মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে টানা ৪ বছর কাজ করেন মাহি। পাশাপাশি নিজের ও ভাইবোনদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন সেই স্বল্প খরচে। ব্যবসাটি ভালোভাবে শিখে নেওয়ার পর নিজের পাঁয়ে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু মাহির।
অবশেষে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ধার দেনা করে গাউসিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সী খোলেন তিনি। শহরের কেন্দ্রস্থলে নিউ ক্লোথ মার্কেট সংলগ্ন মদিনা মোড়ে ৩ হাজার টাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন মাহি। উপার্জন অর্থ দিয়ে ভাইবোনদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি নিজেও পড়েছ্নে সৈয়দপুর কলেজে। আচার-আচরণ ও টিকিট হোম ডেলিভারী দেওয়ার কারণে মাহির ব্যবসা ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে সৈয়দপুরসহ আশপাশের শহরের বিমানের যাত্রীদের কাছে। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছে ছোট ভাই মাহতাব। এবং বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকেও পেয়েছেন সর্বাত্মক সহযোগিতা।
বর্তমানে মাহি অর্থনৈতিকভাবে সফল একজন নারীর নাম। কষ্টে ভরা জীবনে জীবনযুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের ফলে এখন একে একে সফলতা যেনো নিজেই ধরা দিচ্ছে মাহির কাছে। বিভিন্ন ইলেক্ট্রোনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় মাহির সংগ্রাম নিয়ে স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পায় কয়েকবার। ফলে সফলতার স্বরুপ জয় করেছেন কয়েকটি এওয়ার্ড। আর সেই সফলতার সম্মাননা স্বরুপ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে একজন সফল অর্থনৈতিক উদ্যোক্তা হিসাবে প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে তারপর জেলা পর্যায়ে এবং সর্বশেষ বিভাগীয় পর্যায়ে পেলেন জয়িতা এওয়ার্ড। জিরো থেকে হিরোইন হওয়া মাহি এখন অনুকরণীয় একটি নাম জীবনযুদ্ধে নামা প্রত্যেক কর্মক্ষম নারীর কাছে।