Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

খাগড়াছড়িতে আট মাসে ৯ ধর্ষণ খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে আট মাসে ৯ ধর্ষণ

পার্বত্য খাগড়াছড়িতে বেড়েই চলেছে ধর্ষণের ঘটনা। এরমধ্যে এক শিশুকে ধর্ষণের পর নৃসংশভাবে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে এ পহাড়ি জনপদে। কিন্তু বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের ফাঁকফোকঁড় দিয়ে অপরাধীরা বরাবরই পার পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে জেলার সচেতন মহল। তাদের মতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ধর্ষণের মতো ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে খাগড়াছড়িতে।
 
 
জেলায় গত আট মাসে ৯ শিশু ও কিশোরী ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সবশেষ ৭ আগস্ট মাটিরাঙ্গার গোমতিতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
 
সরকারি ও বেসরকারি তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি শিক্ষকের হাতে ধর্ষিত হয় প্রাক-প্রাথমিকের এক শিশু। নতুন বই দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের উত্তর গঞ্জপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির ওই শিশুকে ধর্ষণ করে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ ঘটনার ক'মাস পরেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন মাটিরাঙ্গায় ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী।
 
এরপর ২৯ মে মহালছড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় তিন কিশোরী। সন্ধ্যার দিকে মাইসছড়ির মানিকছড়ি মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গল্প করার সময় থুইচিং মারমা, সাটিং মারমা, হৃদয় চাকমা ও সাইফুল মারমা নামের চার বখাটে তাদেরকে পাশের সেগুন বাগানে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।
 
২১ জুন বন্ধুর সঙ্গে খাগড়াছড়ি সদরের জেলা পরিষদ পার্ক বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। এরপর গেল ২৮ জুলাই দীঘিনালার নয়মাইলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দিনভর খোঁজাখুঁজির পর শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ৯ মাইল এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
 
সর্বশেষ গত ২ আগস্ট দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে স্থানীয় বড়পেটা চাকমা নামে এক বখাটে। এছাড়াও গেল ৭ আগস্ট মাটিরাঙ্গায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
 
দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, কির্তিকা ত্রিপুরা হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন অতিবাহিত হতে চললেও পুলিশ এখনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
নারীরা ঘরে ও বাইরে সমানভাবে অনিরাপদ মন্তব্য করে নারী মুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক কৃষ্টি চাকমা বলেন, অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় পাহাড়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে।
 
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক নাজির আহমেদ বলেন, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িকতার মাপকাঠিতে অনেক সময় অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধীদের সাম্প্রদায়িকতার মাপকাঠিতে বিচার না করারও দাবি জানান তিনি।
 
খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধী অনেকাংশে কমে যেত।
 
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বরাবরই তৎপর আছে। ৯ শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ৫টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।