Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

কুষ্টিয়ার আমলা সরকারী কলেজের সাফল্য কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার আমলা সরকারী কলেজের সাফল্য

ধবধবে সাদা পোশাকে তারুন্যোর উচ্ছালতায় শিক্ষার্থীদের একমাত্র বিদ্যাপিঠ আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজ। শিক্ষার্থীদের উচ্ছালতার মুলে রয়েছে ভালো ফলাফল, শিক্ষার পরিবেশ, কঠোর অধ্যাবসায়। ইতিপুর্বে দুই যুগেও যে কলেজটিতে ৫০ শতাংশ পাশ করেনি। সেই কলেজে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে। পাশের হার ৭৮.৬৭৮ শতাংশ। তবে কলেজের শিক্ষকদের লক্ষ্য ১০০ ভাগ সাফল্য। 
জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১লা জুলাই বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষকনেতা শহীদ মারফত আলী এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ৬.৩ একর জমির উপরে প্রতিষ্ঠা করেন কলেজটি। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয়করন করা হয় কলেজটিকে। 

এইচএসসি (মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ী) শাখার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু রয়েছে কলেজটিতে। তবে নেই সম্মান ও উচ্চ শিক্ষার কোন সুযোগ। এতে হতাশ কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারন অভিভাবকরা। কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দুরে  ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারী কলেজ এটি। কলেজটি ঘিরে এলাকার মানুষের স্বপ্ন অনেক।
দুই তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, তিন তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞানভবন, এক তলা বিশিষ্ট কলা ও তিন তলা বিশিষ্ট ডিগ্রিভবন ছাড়াও কলেজটিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে শিক্ষকদের ও ছাত্রীদের থাকার সু-ব্যবস্থা প্রয়োজন। 
কলেজটিকে একটি আধুনিক ও রোল মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কলেজের শিক্ষকরা। 
কলেজ সুত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে আমলা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে ৪২৮জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৮০জন কৃতকার্য হয়। সে বছর পাশের হার ছিলো ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। 

২০১৭ সালে আমলা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে ৩৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২১২ জন কৃতকার্য হয়। সে বছর পাশের হার ছিলো ৫৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
২০১৮ সালে আমলা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে ৩৯৪জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩১০জন কৃতকার্য হয়। এ বছর পাশের হার ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত দুই যুগে সর্বোচ্চ। 

এছাড়া কলেজের লেখাড়াপার পাশা-পাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নিয়মিত ক্লাসটেস্ট ও মডেলটেস্ট পরীক্ষা এবং অভিভাবকদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মহব্বত হোসেন জানান, আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজের এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আমাদের সকলের লক্ষ্য ২০১৯ সালে এই কলেজের পাশের হবে ১০০ ভাগ। তিনি বলেন, আমি এই কলেজে আসার পরে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীদের একটি নিয়মের মধ্যে এনেছি। কলেজে ৮০% এর উপরে নিয়মিত উপস্থিতি নিয়ে এসেছি। সকল শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কলেজ পোশাক চালু করেছি। শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি। খেলাধুলার জন্য ক্রীড়া সামগ্রির ব্যবস্থা করেছি। দুপুরে খাবারের জন্য ক্যান্টিন চালুর ব্যবস্থা চলছে। সেই সাথে কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারী শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের মাধ্যমে কলেজ গেটে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি। বিনা অনুমতিতে কলেজ চলাকালিন সময়ে এবং তার পরেও বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ করেছি। 

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিয়মিত ক্লাসটেস্ট ও মডেল টেস্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। শোভা বর্ধনের জন্য ফুলের বাগান তৈরী করেছি। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের লেখায় দেওয়াল পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করছি। তাদের জ্ঞান চর্চার জন্য লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেছি। 
তিনি আরো বলেন, আমরা আমলা সরকারী ডিগ্রি কলেজে একটি হোস্টেল এবং একাডেমিক ভবনের জন্য আবেদন করেছি। সেই সাথে অনার্স কোর্স চালু করার লক্ষ্যে ভাইস প্রিন্সিপাল পদসহ ৪৪টি পদে শিক্ষকের জন্য আবেদন করেছি। সেই সাথে বিকম কোর্স চালুর জন্য আবেদন করেছি। 

তিনি আরো বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে জাতীয় দিবসগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে লক্ষ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে একটি শহীদ মিনার তৈরী করা হয়েছে। এবং যথাযোগ্য মর্যদায় জাতীয় দিবসগুলো পালিত হয়। কলেজে দলগত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা চাই এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সহায়তায় এই কলেজটিতে একটি আধুনিক ও মানসম্পন্ন আদর্শ বিদ্যাপিঠ হিসাবে গড়ে তুলতে। আমাদের লক্ষ্য হলো এই কলেজের কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে না। শতভাগ পাশ করবে।