Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে পাটচাষ! কৃষি সংবাদচুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে পাটচাষ!

ক্রমাগত লোকসানে পড়ে দিনে দিনে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে চুয়াডাঙ্গার পাট চাষিরা। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর অর্ধেকে নেমে এসেছে পাট চাষ। ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পাট পচানোর জন্য পানির ক্রমাগত অপ্রতুলতা ও শ্রমিক সংকটের কারণে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে চাষিরা। আর পাটের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে ভুট্টা, ধান ও সবজি চাষ। এভাবে চলতে থাকলে সোনালি আঁশখ্যাত পাট চাষ একদিন জেলা থেকে বিলুপ্তি হবার আশংকা রয়েছে। গত বছরে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হলেও চলতি বছরে তা অর্ধেকেরও নীচে নেমে এসেছে।

জানাগেছে, পাট বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী আঁশ উৎপাদনকারী অর্থকরী ফসল। পাটচাষ ও পাট শিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত। স্বাধীনতার পরও প্রায় দেড় যুগ ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদানই ছিল মুখ্য। পাট উৎপাদনকারী পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পাটের মান সবচেয়ে ভালো এবং উৎপাদনের বিবেচনায়য় ভারতের পরে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট ছড়ানো পানির অভাবে কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে সাত-আট মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি মণ পাট সর্বোচ্চ ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজারমূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন। ষাটের দশকেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাট ক্রয় কেন্দ্র ছিলো, আবার বড় বড় জুট মিলের চাহিদা পূরণে কৃষকরা পাট চাষে ব্যাপক লাভবান হতেন। অপরদিকে ক্রয় কেন্দ্রগুলো পাট সংগ্রহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করতো। ফলে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকরাও ঝুঁকে পড়তো পাট চাষে। 
          
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৪টি উপজেলায় সর্বমোট পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৩শত ৯৪ হেক্টর জমি। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ২শত ৫০ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় মাত্র ৮শত হেক্টর জমি। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিলো ২২ হাজার ৭০ হেক্টর । গত বছরের চাইতে এ বছর পাট চাষ কম হয়েছে ১২ হাজার ৬শত ৭৬ হেক্টর, যা অর্ধেকেরও কম। জেলায় এ বছর ২২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার ধারে কাছেও নেই লক্ষ্যমাত্রা। আষাড় মাস শেষ হয়ে এলেও তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। এলাকার বেশির ভাগ খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় অল্পসংখ্যক কৃষক, যারা পাট চাষ করছেন তারা চিন্তিত। পাট ঠিকমতো পচাতে না পারলে পাটের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চাষিরা জানালেন-যখন পাট চাষ করে ঘরে তোলে তখন পাটের দাম থাকে ৯শত থেকে ১২শত টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ৭ থেকে ৮ মন। সে হিসেবে এক বিঘা জমির পাট বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। অথচ এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে গিয়ে খরচ হয় সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। সব চেয়ে বড় সমস্যা পাট কেটে জাগ দেয়া। তার ওপর পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির নিশ্চয়তা নেই। পাট চাষ করে চাষিরা আর এর সুবিধা ভোগ করে আড়ৎ ব্যবসায়ীসহ বড় বড় মহাজনেরা। দেশে এখন অনেক ধরণের চাষ উঠেছে। এক বিঘা জমিতে বছরে তিন বার চাষাবাদ করার মত ফসল আছে। লোকশান জেনে কেউ পাট চাষ করবে কেন। যতটুকু চাষ হয়েছে জ্বালানির পাটকাটি চাহিদা মেটার জন্য। তার ওপর কৃষি বিভাগের পাট চাষের ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে জেলাতে নেই কোনো পাট ক্রয় কেন্দ্র।
           
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নাঈম আস শাকিব বলেন, ধানের দাম ভালো পাওয়ায় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চাষিরা। তার ওপর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পাট জাগ দেবার জায়গার সমস্যাতো আছেই। এছাড়াও বর্তমানে ধান পাটের চাষের চাইতে কৃষকেরা সবজি চাষে বেশি আগ্রহী। যার কারণে জেলাতে পাট চাষ হ্রাস পেয়েছে।বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পাট চাষ একদিন আশীর্বাদ স্বরূপ ছিলো। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিশাল সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। বিশ্ব বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাটকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের জীবনযাত্রার মান হবে উন্নত, আর পাট ফিরে পাবে তার হারানো ঐতিহ্য।