Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করার আহ্বান ফখরুলের রাজনীতি

ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করার আহ্বান ফখরুলের

 
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত বুধবার ১১ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংসদীয় কটুবাক্যের ধারাবর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন- বিএনপি গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা পরিবর্তন করলো কেন? প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য উদ্ভট, অলীক ও অন্তঃসারশূন্য। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুধুমাত্র প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য, বানোয়াট অপপ্রচার। বিএনপি গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের দ্বারা সংশোধিত। আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল সেই একই কায়দায় এখন পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে, সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের দুর্নীতি বিরুদ্ধ অবস্থান স্পষ্টতর করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্য পদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ এই বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোনো দলের গঠনতন্ত্রে সদস্যপদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেয়ার বিধান নেই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে আওয়ামী অবৈধ সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন। এতে কোনো দোষ নেই, এতে কোনো পাপ নেই, এতে কোনো অন্যায় নেই।’
বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে কাল্পনিক সিন্ডিকেট-সংবাদ পরিবেশন করার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর একই রকম বক্তব্যে প্রমাণিত হয়- সরকার বিএনপি, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো- বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিওতে) অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারি ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের কোনো অশুভ নীলনকশার অংশ না হবার জন্য আমি বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ এত বোকা নয় যে, সরকারের এসব ছল-চাতুরি বুঝতে পারে না। সরকারের উচিৎ হবে এইসব নোংরা কৌশল থেকে বিরত থেকে সোজা পথে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারের এইসব অপকৌশল জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
গতকাল কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের দেখা না হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কারাবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মাইনাস ওয়ান থিওরি চেষ্টা হচ্ছে যা ১/১১ থেকে শুরু হয়েছিল। ওনারা তো একটা পার্ট ছিল। তাই ওনারা এখন মাইনাস ওয়ান থিওরি চেষ্টা করছেন।
সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জেগে উঠতে হবে, সকলকে জাগাতে হবে। সময় এসেছে আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করি।
খুব শিগগিরই তফসিল ঘোষণা হবে বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, তফসিল ঘোষণা তো তাদের পছন্দ মতো নির্বাচন কমিশন আছে করতেই পারে সেটা গ্রহণ করার ব্যাপার আছে। সে জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব যথাসময়ে এবং সেই সিদ্ধান্ত আমরা আপনাদের জানাবো।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।