Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

বাচ্চুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ মুন্সিগঞ্জ

বাচ্চুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ

মুন্সীগঞ্জ সহ সারা বাংলাদেশে আবারো জেএমবির জঙ্গিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। গোপনে জেএমবির জঙ্গিরা গোপনে তৎপরতা ফুটে উঠেছে। জঙ্গি সংঘঠনের সাংগঠনিক সিন্ধান্ত অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত জেএমবি জঙ্গিও সামরিক কমান্ডার আব্দুর রহমান। তবে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত বাকি জঙ্গিদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যায় জড়িত পলাতক পাঁচ জঙ্গি উত্তরাঞ্চলে আত্মগোপনে রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ওই লেখককে হত্যার জন্য জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা সিরাজদীখানের দুর্গম চরাঞ্চলে আস্তানা গাড়লেও কিলিং মিশন বাস্তবায়নের পর তারা গাজীপুরের শ্রীপুরের আস্তানায় থাকে। 

ওই আস্তানায় পুলিশের অভিযানের আগেই সটকে পড়ে পাঁচ জঙ্গি। তবে সেখান থেকে জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডার আবদুর রহমান ওরফে লালুকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। এরপরই বাচ্চু হত্যাকান্ডে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

এদিকে বাচ্চু হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘদিনেও পলাতক অপর আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্ক কাটছে না বাচ্চুর পরিবারের সদস্যদের। তারা বলছেন, সব আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে তাদের চলাফেরাও সীমিত করে দিয়েছেন। তারা চান, জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাতেই শাজাহান বাচ্চুর পরিবার স্বস্তি পাবেন। নিহত শাহজাহান বাচ্চুর পরিবারে দিন কাটছে আতঙ্কে।

জেলার পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, পলাতক ওই পাঁচ জঙ্গি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক বিশেষ চৌকস টিম উত্তরাঞ্চলের বিভিন্য স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। হয়তো তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

গত ১১ জুন সিরাজদীখানে শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রাথমিক আলামত বিশ্নেষণে পুলিশ নিশ্চিত হয় ওই হত্যাকান্ডের পেছনে জঙ্গিদের হাত রয়েছে। গত ২৪ জুন গাজীপুরের শ্রীপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আবদুর রহমান ওরফে লালুকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তিতে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া চারজনের মধ্যে এই আব্দুর রহমান লালুই গুলি করেছিল বাচ্চুকে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সিরাজদীখান থানার পরিদর্শক ওসি-(তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, আব্দুর রহমান ওরফে লালুকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। ওই জঙ্গি বাচ্চু হত্যা ছাড়াও জেএমবির কার্যক্রম নিয়ে তথ্য দেয়। সে জানিয়েছিল, তার নেতৃত্বে কিলিং মিশনে চারজন সরাসরি অংশ নেয় এবং নেপথ্যে আরও দুইজন ছিল। সিরাজদীখানের চরাঞ্চলে তাদের আস্তানায় অভিযানে গেলে ফেরার পথে নিহত হয়েছিল ওই জঙ্গি। তবে তার আগেই তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় সামরিক কমান্ডার আবদুর রহমান ওরফে লালু বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে অনেক তথ্য দিয়েছে। বাচ্চু হত্যায় জড়িত অপর জঙ্গিদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থেও পলাতক জঙ্গিদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

প্রাথমিক তদন্তে ও সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক, লেখক ও প্রকাসক শাহজাহান বাচ্চু হত্যার পলাতক পাঁচ জঙ্গি উত্তরাঞ্চলে অবস্থান করছে বলে তথ্য রয়েছে। তাদের বাড়িও উত্তরাঞ্চলে। এসব জঙ্গি অপর সহযোগীদের নিয়ে ওই এলাকায় নিজেদের গোপন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও তথ্য মিলেছে। তবে পুলিশও হাত গুটিয়ে বসে নেই বলে জেলার পুলিশের দাবি। পুলিশের একাধিক টিম এ নিয়ে কাজ করছে। 

উল্লেখ্য, গত আড়াই বছর আগে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় থাকাবস্থায় লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার টার্গেট কওে জেএমবির জঙ্গিরা। সে সময় জঙ্গিদের হত্যার হুমকির কারণে শাহজাহান বাচ্চু পঞ্চগড় থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের কাকালদি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। সেখান থেকেই শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার উদ্যেশ্যে পিছু নেয় পুরনো জেএমবির জঙ্গিরা। হত্যাকান্ডের তিন মাস আগেই জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় সামরিক কমান্ডার আবদুর রহমান ওরফে লালু সিরাজদীখানের খাসমহল বালুরচর এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। সেখানেই হত্যার পরিকল্পনা ও ছক তৈরি করা হয়। 

প্রসঙ্গত, গত ১১ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে পূর্ব কাকালদী (মুন্সীগঞ্জ-শ্রীনগর সড়কের) তিন রাস্তার মোড়ে আনোয়ার হোসেনের ফার্মেসী থেকে বেড় হওয়ার পর দুর্বৃত্তের গুলিতে শাজাহান বাচ্চু খুন হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ২ টি মোটর সাইকেলে ৪ জন এসে তাকে ধরে রাস্তায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। শাহজাহান বাচ্চু ও জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও মুক্তচিক্তার লেখক শাজাহান বাচ্চু বিভিন্ন ব্লগার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন।