Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

নড়াইলের মালিয়াট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে নড়াইল

নড়াইলের মালিয়াট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে

নড়াইলের মালিয়াট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হতে এবার এসএসসি পরীক্ষায় মাত্র ২ জন ছাত্রী পাস করেছে। ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয় হতে ৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। জানা গেছে প্রধান শিক্ষকের দূর্ণীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় মুখার্জীর বাড়ি যশোর সদরের শুড়া গ্রামে। তিনি ২০০৭ সালে মালিয়াট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর ঐতিহ্যবাহি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান কার্যক্রমে ধ্বস নামে। তার সীমাহীন দূর্ণীতি অনিয়মের কারনে ১১৯ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। সে কারনে সহকারি শিক্ষকরাও অনেকটা শিথিলতার সাথে বিদ্যালয়ে গমনাগমন করেন। এ কারনে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের এ বিদ্যালয়ে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

এক সময় এ বিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৭২ জন শিক্ষার্থী। ক্লাস ঠিকমত না হওয়ায় তারাও ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসে না। আগামী ২০১৯ সালে মাত্র ১০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষককে সংশোধিত করা না হলে আগামীতে এ সংখ্যা আরোও কমে আসবে বলে জানিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারি শিক্ষক। তারা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক বিজয় মুখার্জীর আচরনের পরিবর্তন না হলে এ বিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রধান শিক্ষক কারো মতামতের মূল্যায়ন না করে নিজের খাম খেয়ালি সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। নিজে কিভাবে স্কুল ফাঁকি দিবেন এবং আর্থিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন সেসব কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর এসব কাজ নির্বিঘœ করতে নিজের ইচ্ছামত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। তিনি তার আজ্ঞাবহ একই শিক্ষিকাদের বার বার টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) নির্বাচিত করে আসছেন। সুকৌশলে নিজের মন গড়া কমিটি করে আসছেন বারবার। এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে সে শিক্ষকের উপর কৌশলে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। ভয়ে শিক্ষকরা তটস্থ থাকেন। বর্তমান কমিটিতে যাকে সভাপতি নির্বাচন করেছেন সরকারি বিধি অনুযায়ী তিনি আদৌ সভাপতি হতে পারবেন না। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি সুকান্ত রায় একজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় কর্মরত আছেন। এই সুকান্ত রায় একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। ২০১২/১৩ এবং ২০১৭ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোন তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে পারবেন না। সরকারের এ নির্দেশ অমান্য করে ধূর্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় মুখার্জী নিজের স্বার্থ সুবিধা হাসিল করার জন্য সুকান্ত রায় কে সভাপতি নির্বাচন করেন। নিয়োগের সময় প্রধান শিক্ষক বিজয় মুখার্জী স্থানীয়দের নিকট প্রতিশ্রæতি দেন মালিয়াট গ্রামেই তিনি বাসা নিয়ে থাকবেন। কিন্তু অদ্যাবধি একটি রাতও তিনি মালিয়াটে থাকেননি। যশোরের শুড়া গ্রাম হতে প্রায় ৩০ কিঃ মিঃ পথ পাড়ি দিয়ে মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে আসেন। গত আগষ্ট মাসে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এমএলএসএস (দপ্তরী) পদে মালিয়াট গ্রামের বিশ্বজিৎ রায় কে নিয়োগ দেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী বে-সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার জন্য এমএলএসএস পদে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই তার বয়স সীমা ৩০ বছর এর মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্বজিৎ রায়ের বয়স ৩০ বছরের উর্ধ্বে। জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টম্বর । গত আগষ্টের ১৯ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছে বলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। বিধি বহির্ভূতভাবে চাকুরী দেয়ায় এ পদের একজন প্রার্থী মিঠুন কুমার মিশ্র গত ৩০ সেপ্টেম্বর নড়াইল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং ৬৮/১৭। এর আগেও বিগত কমিটি গঠনের সময় মহিলা অভিভাবক সদস্য নিপা রায়ের স্বাক্ষর জাল করে কমিটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষাবোর্ডে জমা দেন। এ ঘটনায় অভিভাবক সদস্যরা প্রধান শিক্ষকের বিরূদ্ধে শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেন। বোর্ডের পক্ষে নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার এ ঘটনার তদন্ত করেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। এছাড়া শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে ৬ ভোট পেয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন সহকারি সিনিয়র শিক্ষক লঙ্কেশ্বর বিশ্বাস। তাকে বাদ দিয়ে তিনি তার প্রতিদ্ব›িদ্ব ৪ ভোট পাওয়া প্রবীর বিশ্বাসকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে রাখেন। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোট পরিচালনাকারি সহকারি প্রধান শিক্ষিকা ইতি রানী বোস এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তার উপর ক্ষুব্ধ হন প্রধান শিক্ষক। এমনকি ওই কমিটিতে সকলের আপত্তি সত্বেও প্রবীর বিশ্বাসকে টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) হিসেবে রাখেন।

এ নিয়ে শিক্ষক ও স্থানীয় মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে সময় এলাকার বিদ্যানুরাগীরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখার স্বার্থে প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক প্রতিশ্রæতি দেন আর কখনও কোন অন্যায় করবেন না। তারপরও থেমে নেই তার কুকর্ম। নিজ স্বার্থ ও অর্থের লোভে অন্যায় অপরাধ করেই চলেছেন। নিজের প্রয়োজনে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রæপিং সৃষ্টি করেছেন। এতে বিদ্যালয়ে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বিদ্যালয়ের ১০ টি  মূল্যবান মেহগিনি গাছ বিক্রি করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে ২ লক্ষাধিক টাকার গাছ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছেন। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের আপত্তি সত্বেও ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তিনি গাছগুলি বিক্রি করেন। এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, তিনি ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসেন না। আর যেদিন আসেন, সেদিন অফিসিয়াল কাজ দেখিয়ে বিদ্যালয় হতে বেরিয়ে যান। এলাকার সচেতন মহল বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দূর্ণীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন। প্রধান শিক্ষক বিজয় মুখার্জীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে এলাকায় দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি পক্ষের লোক সুকান্ত রায় চাপ সৃষ্টি করে অযোগ্যতা থাকা সত্বেও সভাপতি হয়েছেন। তিনিই এমএলএসএস নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়ে দু’গ্রæপের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলছে। তাদের দ্ব›েদ্বর কারনে স্কুলে অস্থিরতা চলছে।