গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে হিস্টোরিয়া আতঙ্ক, স্কুল ছুটি শিক্ষা /  গোপালগঞ্জ / 
গাপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় একের পর এক স্কুলের শিক্ষার্থীরা হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আক্রান্তদের অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিনই নতুন কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীরা হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় স্কুলগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম।
এদিকে, হিস্টেরিয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে আক্রান্ত স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই স্কুলগুলোর অফিস খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে সব ধরণের পাঠদান।
এছাড়া হিস্টেরিয়া আতঙ্কে উপজেলার অন্য স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার শতকরা ৪০ ভাগে নেমে এসেছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে এসব স্কুলে এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ছুটি দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সোমবার (৩১ আগস্ট) সরেজমিনে সরেজমিন গাড়লগাতী কেএম উচ্চ বিদ্যালয় ও খান্দারপাড়া ইউনিয়ন ইন্দুহাটি হলধর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে। শিক্ষকরা লাইব্রেরিতে বসে আছেন। কোনো শিক্ষক অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছেন। আবার বাড়িতে শিক্ষার্থী কেমন আছে সে খবরও তারা রাখছেন।
ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তারাপদ বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে আলাপ করে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার ও শনি সরকারি ছুটি থাকায় রোববার স্কুল খোলা হবে।
এদিকে, হিস্টেরিয়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় জেলা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা অফিস থেকে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
মুকসুদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার খান্দারপাড়া ইউনিয়ন ইন্দুহাটি হলধর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথমে এ রোগে আক্রান্ত হয়। সেখানে ২ জন শিক্ষক ও ১ কর্মচারী হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। পরে একে একে ওই স্কুলের ৬০ জন, গাড়লগাতী কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ জন, বহুগ্রাম পিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ জন, সুরুপী সালিনা বক্সা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, হাদীউজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, মুকসুদপুর জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয়।
২৭ আগস্ট থেকে গত ৫ দিনে উপজেলার ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮টি বিদ্যালয়ের ৯৭ জন শিক্ষার্থী এ রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২০ জন কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে।
এরা হলো, সোমাইয়া (১৫), মিম আলম (১৫), সুইটি (১৩), সেতু (১৫), সিমু (১৫), লায়লা (১৫), রেশমা (১৬), বর্শা (১৫), লুবাদা (১৫), লাবনী (১৫), সাহাবীর (১৬), আজিজুর রহমান (১৪), তারেক কাজী (১৭), অপু মিয়া (১৭), নিশি (১৪), জলি (১৫), পারভীন (১৪), আমিন মুন্সি (১৫), রিমা (১৫)।
এদিকে, সোমবার নতুন করে মুকসুদপুর জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও বোয়ালিয়া নিজাম উদ্দিন স্কুলে ২ শিক্ষার্থী হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ আলী মোল্লা।
তিনি জানান, স্কুল ২টি ছুটি দিতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দেখলে ভয় লাগে। আমি হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখে নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে বলেছি।
মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এখানে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের খিঁচুনি হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের পাশে বসে আছেন।
অভিভাবকরা জানান, হাসপাতালে আনার পর শিক্ষার্থীদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পড়িয়ে রাখা হচ্ছে। তবে ঘুমের ওষুধের কার্যকারিতা কমে গেলে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কে এম মনিম-উল-হাবিব এ রোগ সম্পর্কে বলেন, এটি আতঙ্কিত হওয়ার মতো রোগ নয়। এ রোগে এক জনের দেখাদেখি অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ জন্য অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে এবং শরীরের যতœ নেয়।