Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হিজড়ারা ! রাজবাড়ী

ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হিজড়ারা !

 ঈদ সামনে রেখে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক হিজড়া দল। এদের ৬/৭ জনের একেকটি দল বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান, অফিস ও বাসা-বাড়িসহ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী ফেরি ও সিরিয়ালে আটকে থাকা দুরপাল্লার যানবাহনে।

চাঁদার দাবীতে তারা চিৎকার-চেঁচামেচি ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। কোন কোন সময় তাদের কেউ কেউ বিবস্ত্র হয়ে মানুষকে নাকাল করে টাকা আদায় করে। ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে বেড়েছে এদের তৎপরতা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, হিজড়াদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায় না। যে কারণে তারা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অনেকেই বলেন, হিজড়াদের টাকা তোলার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করে থাকেন। এ সুযোগে হিজড়াদের টাকা তোলা এখন জোড়পূর্বক চাঁদা আদায়ে পরিণত হয়েছে। 

হিজড়ার দল বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে আদায় করছে মোটা অঙ্কের টাকা। সরেজমিন রাজবাড়ী শহরের ‘বে সফট’ জুতার শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৪/৫ জনের এক দল হিজড়া ১ হাজার টাকা টাকার দাবিতে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। এসময় শোরুমের ম্যানেজার দ্রুত মালিককে ফোন করলে মালিক দু’শ টাকা দেয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু হিজড়ারা নাছর বান্দা। টাকা না দিলে তারা কিকি করবে তা বলে ম্যানেজারকে হুমকি দিতে থাকে। উপায়ন্ত না পেয়ে চারশ টাকা দিয়ে মুক্তিপায় ম্যানেজার। এসময় ম্যানেজার আহসান হাবিব জানান, এদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। পাশে থাকা অপর শোরুম ‘লোটো’ এর ম্যানেজার সোহেল রানা জানান, হিজড়ার দল তার এখানেও হানা দিয়ে টাকা নিয়েছে। দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখে এদের উৎপাত বেড়ে যায়। 

এসময় হিজড়াদের দলনেতা শাকিলা জানায়, তারা এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের বিভিন্ন দলের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেয়া আছে। এক দল অন্য দলের এলাকায় যায় না।

দৌলতদিয়া ঘাটে দুরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহন প্রায়ই দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থাকে। এসকল পরিবহনের যাত্রীরা হিজরাদের দ্বারা নাজাহেলের শিকার হন। অনেকেই তাদের হাতে অপমানিত হওয়ার ভয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য হন। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলেও হতে হয় অপমানিত। সম্প্রতি এক সাংবাদিক তাদের চাঁদাবাজির ছবি তুলতে গিয়ে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এছাড়া ফেরিতে নদী পারাপারের সময় প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানান, তিনি তার প্রাইভেট কারে ঢাকা থেকে রাজবাড়ীতে ফিরছিলেন। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে উঠে তিনি তার গাড়ীতেই বসে ছিলেন। এসময় একদল হিজড়ারা তাদের আঙুরে থাকা আংটি দিয়ে বিশেষ কায়দায় গাড়ির গ্লাসে আঘাত করে। দ্রুত ড্রাইভিং সিটে বসা তার এক আত্মীয় তাদের হাতে ১শ টাকা দিয়ে দেয়। এরপর তারা ঘুরে এসে তার পাশের জানালার কাঁচে একই ভাবে আঘাত করতে থাকে। তখন মনে হচ্ছিল হয়ত কাঁচটি ভেঙেই যাবে। এসময় তিনি বিরক্ত হয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এসে ধমক দিলে তারা চিনতে পেরে কিছুটা চেপে যায়। এভাবে দুর-দুরান্তের সাধারন মানুষকে হয়রানি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে যাচ্ছে।

একই ভাবে পাটুরিয়া ঘাটেও সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে হিজড়ার দল টাকা আদায় করে থাকে। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের ছাত্র গোয়ালন্দের জিসান আদিত্য জানায়, সে গত শুক্রবার গোল্ডেন লাইন পরিবহনে বাড়ি ফিরছিলো। পাটুরিয়া এসে তাদের বাসটি সিরিয়ালে আটকা পড়লে যাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে কটুক্তি করে হিজড়ার দল টাকা আদায় করে। 

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মীর্জা একে আজদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় এটা চাঁদাবাজি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তবে এটা সঠিক হিজড়াদের টাকা তোলার কৌশল বর্তমানে অত্যাচারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে বিষয়টি অবশ্যই নিয়ন্ত্রন করা হবে।