Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

লোহাগড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণে ভোগান্তি নড়াইল

লোহাগড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণে ভোগান্তি

উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট কার্ড বিতরণে অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি কমছে না নাগরিকদের। সঙ্গে রয়েছে যান্ত্রিক জটিলতা, যা এ বিষয়টিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। আবার অনেকের কার্ড মাঠে কুড়িয়ে পাওয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ বলছেন অসাবধানতা বসত পড়ে যেতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন ততপরতা দেখা যায়নি। 

নড়াইলের লোহাগড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণে বুধবার অনেককে কার্ড না নিয়ে ফিরে যেতে হয়। আবার অদ্ভুত ঘটনাও ঘটছে অহরহ। যেমন বিদেশে অবস্থান করেও আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ ছাড়াই বিতরণ হচ্ছে স্মার্ট কার্ড। জয়পুর ইউনিয়নের ভোটার মো: হাসেম কাজীর ছেলে মো: জাবের কাজী। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে আছেন। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় তার কার্ডও বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয়েও উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সেলিম রেজা বললেন, ভুল বসত অন্য কার্ডের সাথে এটাও বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে।
সূত্রে জানা গেছে, স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় একটি করে প্লষ্টিকের প্যাকেট নাগরিকদের ফ্রি দেওয়ার কথা থকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কার্ড সংরক্ষণের জন্য বাইরে থেকে প্যাকেট কিনে নিতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে কার্ড নিতে আসা মানুষদের। 

স্মার্ট কার্ড বিতরণ কাজে ২৮ জন লোক নিযুক্ত করা হলেও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিতরণ কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছেন একাধিক বহিরাগত মানুষ। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

গত বুধবার (৬ জুন) দুপুরে উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নে চাচই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে এমন অসংখ্য চিত্র দেখা গেছে। স্মার্ট কার্ড বিতরনে কেন এমন অনিয়োম করা হচ্ছে তার কোন সদোত্তর দিতে পারেননি কার্ড বিতরনে থাকা টিম ম্যানেজার মো: হায়দার আলী খান। 

চাচই গ্রামের মোঃ কালাম বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ড নেওয়ার জন্য ১ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছি। সকালে  আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়েছি। ২টা বাজে এখনও হাতে কার্ড পাইনি। কিন্তু বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে বিতরণ কারিদের ম্যানেজ করে আমাদের পরে আসা লোকজন কার্ড নিয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ আরও অনেকের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি দপ্তরে কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, এখানে অনিয়োম আর অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। সকালে এসেছি, এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কিন্তু কার্ড পাইনি।

জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য কাজী আকিদুজ্জামান বলেন, এখানে সঠিক ভাবে স্মার্ট কার্ড বিতরণ হচ্ছে না। অনেকে সকাল থেকে এসে বসে থাকলেও কার্ড পাচ্ছে না। কিন্তু কেউ কেউ পরে এসেও কার্ড নিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ এবং বয়স্ক লোকদের কার্ড বিতরণের জন্য নেই কোন সুব্যবস্থা। 

জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার চাচই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তিনি বেশ কয়েকটি স্মার্ট কার্ড কুড়িয়ে পেয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে নড়াইলের লোহাগড়া নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, অনেকের স্মার্ট কার্ড আসেনি। কী কারণে আসেনিÑ জানতে চাইলে এই নির্বাচন কর্মকর্তা কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, যাদের কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না তাদের ঠিকানা লিখে রাখা হচ্ছে। পরে কার্ড পেলে তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অবশ্য এ কর্মকর্তার এমন আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেকে। তাদেরই একজন উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ভোটার বিউটি বেগম। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নির্দিষ্ট স্থানে গিয়েও স্মার্ট কার্ড পাইনি। কবে পাব জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন কার্ড রেডি হলে ফোনে আপনাদের জানানো হবে। এ কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে ১৬ এপ্রিল থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ২৬ জুন বিতরণ কার্যক্রম শেষ করতে হবে। উপজেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ জন। বিতরণের জন্য মোট স্মার্ট কার্ড এসেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৬ পিচ। বিভিন্ন কারণে ৪ হাজার ৫১৮ জন নাগরিক এই সময়ের মধ্যে স্মার্ট কার্ড পাবেন না।