Opu Hasnat

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

ঝালকাঠিতে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম

ভিক্ষুকদের সমস্যার সমাধান হলে ভিক্ষা পেশা ছাড়ার অঙ্গিকার করলেন ৪০ জনে ঝালকাঠি

ভিক্ষুকদের সমস্যার সমাধান হলে ভিক্ষা পেশা ছাড়ার অঙ্গিকার করলেন ৪০ জনে

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হকের নির্দেশনায় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতাহার মিয়া ভিক্ষুকদের পূনর্বাসনের লক্ষে একটি তালিকা তৈরী করেন। এ তালিকায় সদর উপজেলার ২৫০ জন ভিক্ষুকের নাম অন্তরর্ভূক্ত করা হয়। যাচাই বাছাই করে প্রাথমিক পর্যায়ে ইতিমধ্যেই ৪০ জন ভিক্ষুককে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ঝালকাঠিতে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই কার্যক্রমের আওতায় আনা ভিক্ষুকরা তাদের সমস্যার সমাধান হলে ভিক্ষা পেশা ছেড়ে দেয়ার অঙ্গিকার করেন। জেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের এক দিনের বেতন প্রদানের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের ব্যায় চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার প্রশিক্ষণের শুরুর দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অংশ নেয়া ভিক্ষুকদের পছন্দমত সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রশিক্ষণের শেষ দিনে তাদের চাহিদানুযায়ী বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়। এদের মধ্যে ৩৪ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ ভিক্ষুক রয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এদের কাছে জানতে চান কি চাহিদা পূরণ করলে তারা ভিক্ষা পেশা ছেড়ে দেবে। তাদের মধ্যে ১৫ জন গাভী পালন, ১১ জন মুরগীর দোকান, ৫ জন হাঁস মুরগী পালন, ২ জন ভাতের হোটেল, ১ জন ভ্যানে সবজি বিক্রি, ১ ডিম বিক্রি, ১ জন রিক্সা চালনা, ১ জন চা বিক্রি, ১ জন শেলাইয়ের কাজ, ১ জন ছাগল পালনের কথা জানায়। ১ জনের কোন মতামত পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে সর্বনিæ ২৬ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৮০ বছর বয়স পর্যšত্ম নারী ও পুরুষ ভিক্ষুক রয়েছে। সদর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের গ্রামে এসব ভিক্ষুকদের মধ্যে পেটের সমস্যা, হাত ভাঙ্গা, বার্ধক্য, রক্ত শূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, পায়ে সমস্যা, চোখে কম দেখা কানে কম শোনা, শরীরে কাঁপুনি, কোমর হাঁটু মেরুদন্ডে ব্যথা, ব্রেন স্ট্রোক, এক পা না থাকা, মাথা ব্যথা, হাতের আঙ্গুলে সমস্যা রয়েছে। এসব কারণে তারা ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় বলে জানিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভিক্ষুকদের উপর জরিপ চালিয়ে এসব সমস্যা শনাক্ত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রশিক্ষনে অংশ নেয়া এসব ভিক্ষুকরা অন্যের জমিতে, সরকারী সম্পত্তি এবং অনেকে নিজের জমিতে বসবাস করে ভিক্ষার মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করছে। 

উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণের শেষ দিনে কেওড়া গ্রামের ভিক্ষুক ফাতেমা বেগম, পাকমহর গ্রামের রওশন আরা, পিপলিতা গ্রামের নেহারু বেগম, বাসন্ডা গ্রামের সঞ্জিবসহ আরো অনেকে এই প্রশিক্ষণের বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সরকার আমাদের সমস্যার সমাধান করে পুনর্বাসনে এগিয়ে এলে আমরা এই পেশা ছেড়ে দেব। এটা সকলের কাছে ঘৃণার পেশা। ঝালকাঠি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর সিনিয়র প্রশিক্ষক মোঃ মোখলেছুর রহমান এদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতাহার মিয়া জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ভিক্ষুক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমরা কাজ করছি। আমি এদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যা জেনে তা সমাধানের আশ্বাস দেই। তারা খুশি হয়ে এই পেশা  ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাদের পূনর্বাসনের জন্য সচ্ছল ব্যক্তিদের সহায়তায় ফান্ড তৈরী করে এই প্রশিক্ষণ এবং পূনর্ব্সানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।