Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

অতি-বর্ষনে মুন্সীগঞ্জের ধান চাষিরা সর্বশান্ত কৃষি সংবাদমুন্সিগঞ্জ

অতি-বর্ষনে মুন্সীগঞ্জের ধান চাষিরা সর্বশান্ত

কয়েক দিন ধরে চলছে অতি-বর্ষন ও কাল বৈশাখী ঝড়। নতুন ধান ঘরে তোলার আগেই জমির ধানের ক্ষেতে শুধু পানি আর পানি। আর ঝড়ে পাকা ধান বিচ্ছিন্ন আকার ধারন করেছে। জমি থেকে এক গুচ্ছ ধানের আটি পর্যন্ত কেটে আনতে পারে নাই কৃষক ঘরে।

মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের বিল-চকের ১৫ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ভারী বর্ষনের পানিতে তলিয়ে কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে। ধান চাষে যা খরচ হয়েছে-তা অপুরনীয় ক্ষতির সম্মুখে সর্বশান্ত হতে চলেছেন কয়েক হাজার কৃষক।

ধানও এবার সঞ্চিত করতে পারেনি কৃষকরা। এবার কৃষকের ঘরে ঘরে গোলায়-গোলায় এখন পাকা সোনালী ধানের সোধা গন্ধে মৌ-মৌ করার কথা ।

কৃষকরা বলছে একেবারেই সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি আমরা। এখন তো ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজিতে চাল কেনা যায়। এবার বর্ষনে ধানের যে ক্ষতি হয়েছে. তাতে এবার বুঝি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় চাল খেতে হবে। কৃষকের সঙ্গে অতি-বৃষ্টি আর ঝড়ে এবার অবিচার করেছে-এমনই আক্ষেপ করেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিলের ধান চাষী আব্দুল বারেক। 

এই কৃষক আড়িয়ল বিলে এবার ৫ হেক্টর জমিতে ধান ফলিয়েছেন। অথচ ধান কাটার মৌসুমের শুরুতে অতি-বৃষ্টির কারনে তার জমির সব ধানই পানিতে তলিয়ে গেছে। এক আঁটি ধানও পাবেন না বলে তিনি দাবী করেন। এখন স্ত্রী-সন্তাানদের মুখে দু-মুঠো ভাত দিতে পারবেন কিনা-তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।

পাকা ধান ঘরে তোলার মৌসুমের শুরুতে টানা সকাল থেকে টানা বর্ষনে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে ধানের শীষের মাথার উপর দিয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় বর্ষনের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মানুষ সমান বৃষ্টির পানি  ধানের ক্ষেতে। এতে করে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।  বৃষ্টির কারনে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলা ও মাড়াই করাও যাচ্ছে না। 

তাই মুন্সীগঞ্জের কৃষকের এখন মাথায় হাত। ধান চাষাবাদ করে ভালো নেই এখন মুন্সীগঞ্জের কৃষকেরা। 

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়ল বিল, পুইন্যার বিল, কান্দারবিল, হাষাড়গাঁও চক, পাটাভোগ চক, বাড়ৈগাঁও চক ও লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া চকের ধান চাষীদের সঙ্গে কথা বলে বর্ষনের পানিতে পাকা ধান তলিয়ে চার্ষীদের সর্বনাশ হওয়ার চিত্র পাওয়া গেছে। 

জেলার শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার মকবুল হোসেন জানান, দেশের অন্যতম শষ্য ভান্ডার খ্যাত আড়িয়ল বিলের কৃষকরা এ বছর তাদের অর্ধেক পাকা ধানও ঘরে তুলে নিতে পারছেন না। 

ধান উত্তোলনের মৌসুমের শুরুতেই অতি-বর্ষন দেখা দেওয়ায় আড়িয়ল বিলের ১০ থেকে ১২ হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান এখন পানির নীচে। এমতাবস্থায় কয়েক হাজার কৃষক পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে নিতে পারছেন না। 

জমিতে মানুষের ঠাঁই হয় না-এমন পানি বিরাজ করছে। ধানের শীষ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার গাদিরঘাট, মদনখালী, বাড়ৈখালী, আলমপুর, লস্করপুর, মত্যখালী, হাষাড়া, শ্রীধরপুর এলাকাস্থ আড়িয়ল বিলের বিস্তির্ণ জমির পাকা ধান বর্ষনের পানিতে তলিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে, জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া চকের কয়েক হাজার হেক্টর জমি থেকে এক গুচ্ছ ধানও ঘরে তুলে নিতে পারেনি কৃষকরা। বৃষ্টির পানিতে জমির পুরো ধানই এখন তলিয়ে রয়েছে বলে জানান সেখানকার কান্দিপাড়া গ্রামের কৃষক নাসির মোল্লা। 

জেলার লৌহজং উপজেলার মেদেনীমন্ডল, যশলদিয়া ও শীনগর উপজেলার দোগাছি গ্রাম জুড়ে এই যশলদিয়্ াচক। এখানকার কৃষকদের প্রধান শষ্য হচ্ছে ধান। নাসির মোল্লার ১৫ গন্ডা ধান এখন পানির নীচে। ধান গাছের উপর দিয়ে ২ থেকে ৩ হাত উচ্চতায় বৃষ্টি পানি থৈ-থৈ করছে।
 
নাসির মোল্লার মতো একই করুন অবস্থার সম্মুখে পড়েছেন ওই অঞ্চলের কৃষকেরা। যশলদিয়া চকে আজিম বেপারী ২০ গন্ডা, দোগাছি গ্রামের মনির মাদবর ১৫ গন্ডার জমিতে ধান ফলিয়েছেন। বর্ষনে এ কৃষকদের কেউ-ই এবার পাকা ধান ঘরে তুলে নিতে পারেননি। অথৈ পানির নীচে নৌকা কিংবা ট্রলার যোগে ধান কাটা যাচ্ছে না বলে কৃষকদের দাবী। 

এদিকে, বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে জমিতেই পাকা ধান বিনষ্ট হচ্ছে কৃষকের চোখের সামনেই। অতি-বর্ষনের কারনে যেমন ধান কাটা যাচ্ছে না। তার উপর আবার আড়িয়ল বিলে বর্ষনের পানিতে ভেসে আসা অসংখ্য বিষধর সাপের বিচরন ভূমিতে পরিণত হয়েছে। একদিকে অথৈ পানির নীচে সোনালী ধানের শীষ, অন্যদিকে বিষধর সাপের বিচরনের কারনে সাপ আতংক কৃষকের যেন মরার উপড় খড়ার ঘা-হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

জেলার শ্রীনগর উপজেলার গাদিরঘাট, মদনখালী, বাড়ৈখালী, আলমপুর, লস্করপুর, মত্যখালী, হাষাড়া, শ্রীধরপুর এলাকাস্থ আড়িয়ল বিলের বিস্তির্ণ হাজারো হেক্টর জমির পাকা ধান বর্ষনের পানিতে তলিয়েছে। এমতাবস্থায় বিষধর সাপের অবাধ বিচরন ভূমিতে পরিনত হয়ে উঠেছে আড়িয়ল বিল। এতে সাপ আতংকে ধান চাষীরা জমিতে যেতে পারছেন না। 

গাদিরঘাট এলাকার বিলের চাষী আব্দুর কাদের জানান, অতি-বর্ষনের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন চাষীরা। এরই মধ্যে বিষধর সাপের বিচরন ভূমি হয়ে উঠায় জমিতে পাকা ধান কাটার সাহস পাচ্ছেন না চাষীরা। আড়িয়ল বিলের প্রায় জায়গায় ধানের জমিতে এ সাপ দেখা যাচ্ছে। 

দিনমজুর শ্রমিকরা প্রত্যেহ ৫’শ থেকে ৮শ’ টাকার মজুরিতেও পাকা ধান কাটতে যেতে রাজী হচ্ছেন না। আড়িয়ল বিলে পাকা ধান কাটতে গিয়ে সম্প্রতি সাপের কামড়ে এক চাষী সাপের কামড় খেয়েছেন বলে জানিয়েছেন অড়িয়ল বিলের ধান চাষী আকবর মিয়া। আড়িয়ল বিলের আলমপুরের ধান চাষী আলম চাঁন মুন্সী ও লস্করপুরের চাষী মহসিন ঢালী জানান, বিলের সর্বত্র সাপ আতংক বিরাজ করছে। চাষীরা পাকা ধান কাটতে গিয়ে সাপের কামড়ে প্রান হারানোর শংকায় রয়েছেন। তাই এবার অর্ধেক পাকা ধানও বিলের চাষীরা ঘরে তুলে নিতে ভয় পচ্ছেন। এরই মধ্যে বিষধর সাপ বিচরন করায় চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে দেশের অন্যতম শষ্য ভান্ডার আড়িয়ল বিলের ধান চাষীরা।