Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

মুন্সীগঞ্জে পরিবহন খাতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি! মুন্সিগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে পরিবহন খাতে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি!

মুন্সীগঞ্জে পরিবহন খাতে বেপরোয়া ভাবে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। এতে সরাসরি জড়িত ক্ষমতাসিন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মিরা। এদের ছত্রছায়া-নেতৃত্বে শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিক নেতাকর্মীর কাছে জিম্মি বাস, ট্রাক, বেটারি চালিত অটো, টেম্পো ও সিএনজি স্ট্যান্ড।

এতে প্রতি মাসে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অর্ধশতাধিক স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

এসব স্ট্যান্ড থেকে আদায় করা চাঁদার টাকা ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে চলে যায় নেতা, পাতি নেতা, ট্রাফিক পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। 

প্রকাশ্যে স্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদা আদায়ের দৃশ্য চোখে পড়লেও রাজনৈতিক নেতাদের হামলা ও পুলিশ-প্রশাসনের মামলার ভয়ে জন-সাধারণ সকলেই নিশ্চুপ।

সরেজমিনে বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাক, বাস, অটোরিকশা, স্কুটার, অটোবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে জোর পুর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এমনকি এ চাঁদা আদায়ের জন্য বহিরাগত লাইনম্যানও নিয়োগ করেছেন ট্রাফিক পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। 

প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে লাইনম্যানদের। মুন্সীগঞ্জ সদর ট্রাফিক পুলিশের চাঁদা আদায়ের মূল পয়েন্ট হচ্ছে শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর সেতুর ঢাল, সিপাহীপাড়া চৌরাস্তা, শহরের পৌরসভা সংলগ্ন চৌরাস্তা, একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড, মুন্সীরহাট, খাসেরহাট, চিতলিয়া বাংলাবাজারসহ একাধিক পয়েন্ট। দিন, সপ্তাহ ও মাসভিত্তিক চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে এসব পয়েন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মাস শেষে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে উত্তোলন করা এই চাঁদার টাকা বণ্টন হয়ে চলে যায় পুলিশ প্রশাসন সহ রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে।

এদিকে, একই পরিস্থিতি চলছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। সেখানেও  ট্রাফিক পুলিশের ওসি (টিআই) মো: সিদ্দিকের নেতৃত্বে চলছে বিভিন্ন যানবাহন থেকে লক্ষাধিক  টাকা চাঁদা আদায়। 

সেখানে বেপরোয়া-উম্মাদ হয়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের ওসি (টিআই) মো: সিদ্দিক। তার নির্দেশে চলছে বিভিন্ন যান বাহন থেকে চাদা উত্তোলন।

সরেজমিনে আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরে বিভিন্ন রেন্ট-এ কার এবং ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-মুক্তারপুর, শহরের পুরাতন কাচারী-চিতলিয়া-বাংলাবাজার রুটে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার সিএনজিচালিত স্কুটার চলাচল করে। এ রুটে চলাচলরত স্কুটারগুলোকে প্রতিমাসে দিতে হয় গাড়িপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। 

অন্য রুটের স্কুটার মুক্তারপুর স্ট্যান্ডসহ অন্যান্য স্ট্যান্ডে এলেই ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়। এ টাকাগুলো উত্তোলনের পর নিয়োগকৃত লাইনম্যানের হাত হয়ে চলে যায় ট্রাফিক পুলিশের কাছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা লোকজন প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে মুক্তারপুর পৌঁছলেই ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা দিতে হয়। 

মালবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয় এক থেকে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে মাসিক চুক্তি হিসেবে মুক্তারপুর-মাকহাটী, পুরাতন কাচারী-চিতলিয়া রুটে চলাচলরত গাড়িপ্রতি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

সরেজমিনে বিভিন্ন স্ট্যান্ডের সূত্রে জানা গেছে, মুক্তারপুর স্ট্যান্ডে বেতকা, দীঘিরপাড়, টঙ্গিবাড়ী, বালিগাঁও, শিমুলিয়া রুটে সিএনজিচালিত স্কুটার প্রতি ৫০ টাকা, অটোবাইক প্রতি ৩০ টাকা নিয়োগ করা লাইনম্যানের মাধ্যমে আদায় করা হয়। 

এছাড়া মুক্তারপুর স্ট্যান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ, পঞ্চবটি, পোস্তগোলা ও আশপাশ এলাকায় চলাচলরত স্কুটার, লেগুনা থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। এতে প্রতি মাসে আদায় হওয়া লাখ লাখ টাকা পরিবহন শ্রমিক, লাইনম্যান ও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা শেষে চলে যায় ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের পকেটে। 

এ প্রসঙ্গে সদর ট্রাফিক ওসি (টিআই) মো. সাহাদাৎ জানান, দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের স্ট্যান্ড ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের কোনো অনুমতি নেই। কে চাঁদা আদায় করে তাও তার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘাটের একাধিক সূত্র জানায়, এ পিকআপ ভ্যানটির মতো এ নৌরুট পাড়ি দেওয়া বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন থেকে সিরিয়ালের নামে চাঁদা আদায় করে থাকে সংশ্নিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। 

এ টাকা ভাগাভাগি হয় কর্মকর্তাসহ কনস্টেবল পর্যন্ত। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কর্মরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা রোদের মধ্যে দায়িত্ব পালন করেন। শিমুলিয়া ঘাটে দায়িত্বে থাকা কতিপয় ট্রাফিক কর্মকর্তা ট্রাফিক পুলিশের ওসি (টিআই) মো: সিদ্দিক চাঁদাবাজি করতে নির্দেশ দেওয়া আছে। যা এখন ওপেন সির্কেট। এসব চাদা আদায়ের শির্ষ্য ভাগ যায় জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তার পকেটে।

তবে এ প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের ওসি (টিআই) মো: সিদ্দিক চাঁদাবাজি করতে নির্দেশ দেওয়ার কথা সম্পুর্ন অস্বীকার করেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহিন।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মুন্সীগঞ্জ জেলা সার্কেল মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, জেলায় মোট ৬৪৮টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। বাকি কয়েক হাজার চলাচল করে থাকে স্ট্যান্ড কমিটিকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে।