Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

ঝালকাঠিতে বোরো আবাদে সেচ সংকট, খাল খননে বিএডিসি’র ৬ কোটি টাকা ব্যয় কৃষি সংবাদঝালকাঠি

ঝালকাঠিতে বোরো আবাদে সেচ সংকট, খাল খননে বিএডিসি’র ৬ কোটি টাকা ব্যয়

ঝালকাঠিতে বোরো আবাদের এই শুকনো মৌসুমে সেচ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কৃষকরা সেচের পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না এই সময়ে। তাই ধান রোপণের আগে চারা সবুজ থাকলেও পানির অভাবে এখন তা প্রায়ই শুকিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাল ভরাট হয়ে যাবার কারণে খালে পানি না থাকায় এ সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও বিগত ৯ বছরে বিএডিসি সেচ কর্তৃপক্ষ ৯৭ কিলোমিটার খাল খননের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। 

এদিকে খাল খনন না করায় কৃষকদের অভিযোগ খাল খননের নামে এ টাকা গেল কোথায় তা খতিয়ে দেখা দরকার। ঝালকাঠি জেলার অধিকাংশ খাল ভরাট থাকায়  বোরো আবাদের এই মৌসুমে পানি না পাওয়ায় সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। খালে পানি না থাকায় মেশিন দিয়েও পানি উঠানো যাচ্ছে না। ঝালকাঠি ও নলছিটির অধিকাংশ এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। পার্শ্ববর্তী ডোবা নালা থেকে হাতে সেচ দিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছে কৃষকরা। বিএডিসির আওতায় ১৬ টি সেচ নালার কাজ সমাপ্ত হলেও বিদ্যুতের অভাবে এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। এছাড়া ব্লকের কিছু পাম্প বসানোর পর অকেজো হয়ে পরে থাকায় সেচের অভাবে বোরো আবাদ করতে পারছে না কৃষকরা। 

এ প্রসঙ্গে নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের কৃষি জমির মালিক খলিলুর রহমান জানান, আমাদের এই এলাকায় গত বছর এবং এ বছর মাটির নীচে পানির লাইন বসালেও বেশির ভাগ এলাকায় তা চালু করা হয়নি। সেচের এই মৌসুমে পানি না পেলে কৃষকরা এগুলো দিয়ে কি করবে। সরকার আমাগো উপকারের জন্য এসব দিলেও বিএডিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে এর সুফল সময়মতো কৃষকরা পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের লাইন না দেয়ায় অনেক নালা চালু করা যাচ্ছে না। 

কৃষক আঃ হালিম মিয়া জানান, আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় মেশিন দিয়ে খাল থেকে পানি উঠিয়ে সেচ দিতে বিঘাপ্রতি খরচ পরে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। অথচ বিএডিসির মাধ্যমে ব্লকে পানির বিনিময়ে কাঠিপাড়া ব্লক ম্যানেজার আলী আকবর যে ধান কেটে নিয়ে যায় তার দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সে নিজেই জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে যায়। এ কারণেও অনেক কৃষক বোরো আবাদ করছে না। এসব বিষয়ে ঝালকাঠি বিএডিসি সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও কৃষকদের অভিযোগ। কৃষ্ণকাঠি এলাকার কৃষক লাবু সিকদার, নয়াবাড়ি এলাকার আঃ ছবুর মিয়া, আঃ আজিজসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার ছোট-বড় খালগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অনেক খালের জায়গা বেদখল করা হয়েছে। এসব খালগুলো খনন করা হলে বোরো আবাদের এই মৌসুমে সেচ সংকট হতো না। একমাত্র বড় খালে কিছু পানি থাকায় সেখান থেকে দূরবর্তী জমিতে পানি সেচ দিতে প্রচুর টাকা খরচ পরায় অনেকে বোরো আবাদ ছেরে দিয়েছে। শুনেছি বিএডিসির মাধ্যমে প্রতি বছর খাল খননের জন্য বরাদ্দ এলেও তা কোথায় কীভাবে খরচ দেখানো হয় তারাই জানেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হলেও বাস্তবতার সাথে কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বিএডিসির চালু পাইপ দিয়ে পানি সেচের খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে বোরো আবাদে। পাশাপাশি শুকনো জমি আবাদে ট্রাক্টর মেশিনও বিকল হয়ে পরছে। 

ঝালকাঠি বিএডিসি সেচ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, বিগত ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৭২ টি সেচ নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে চালু আছে ৫৬ টি। বাকি ১৬ টি নালা বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। ৪৬ হাজার মিটার সেচ নালার মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৮ হাজার ৪৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

ঝালকাঠি বিএডিসি’র সহকারী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম, জানান, ঝালকাঠির ভরাট খালগুলো সেচ কমিটির মাধ্যমে তালিকা করে খনন করা হবে। এছাড়া ২০ টি স্কীমে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেলে সেগুলো চালু হবে ও কৃষক সেচ সুবিধা পাবে। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এবার বোরো আবাদ বেশি হচ্ছে। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে চাষাবাদ বেশি হয়েছে ১হাজার ২শ ৩৬ হেক্টর জমিতে। কৃষকদেরকে সেচ ও সুষম সার প্রয়োগের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। প্রায় শতাধিক ভরাট খালের তালিকা প্রতি বছর বিএডিসি সেচ বিভাগে ও এলজিইডিতে প্রদান করা হয়। এগুলো সেচের আওতায় এনে সেচ দেয়া সম্ভব হবে।