Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

গোপালগঞ্জে খেসাড়ীর রেকর্ড পরিমান উৎপাদন কৃষি সংবাদগোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে খেসাড়ীর রেকর্ড পরিমান উৎপাদন

গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত মানব দেহের সহনশীল বিনা খেসাড়ী ১ রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলায় প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসাড়ী ১ হাজার ৯ শ’ কেজি উৎপাদিত হয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসারী প্রতি হেক্টরে ৭ শ’ কেজি উৎপাদিত হয়। প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় ৩ গুন উৎপাদন দিয়েছে বিনা খেসাড়ী ১।

বিনা চাষে অনুর্বর নিচু জমিতে এ খেসাড়ী আবাদ করা যায়। রোগ বালাই তেমন নেই। এ জাতের খেসাড়ীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন নেই। বপনের ১১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে ফসল তোলা যায়। এ ফসল চাষাবাদ করে গোপালগঞ্জের কৃষক লাভবান হয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে বিনা উপকেন্দ্রে আয়োজিত মাঠ দিবস ও কৃষক প্রশিক্ষণ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২শ’ কৃষক ও কৃষাণী অংশ নেন। গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলার ১০ হেক্টর জমিতে ২০ টি প্রদর্শনী প্লটে এ জাতের খেসাড়ী আবাদ করা হয়। প্রতি প্লটেই রেকর্ড পরিমান খেসাড়ী উৎপাদিত হয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের সাফলীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুজন রায় বলেন, আমি এ বছরই প্রথম বিনা খেসাড়ী ১ আমার ২৫ শতাংশ নিন্ম ও অনুর্বর জমিতে আবাদ করেছি। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ খেসাড়ীর প্রায় তিনগুণ ফলন পেয়েছি। এ জাতের খেসাড়ীতে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। তাই অধিক উৎপাদন পেয়ে লাভবান হয়েছি।
কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ি ইউনিয়নের নড়াইল গ্রামের বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, এ মৌসুমের যে কোন ফসলের তুলনায় বারি খেসাড়ী আবাদ করে অধিক লাভের টাকা ঘরে তুলেছি। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামের কৃষক এ খেসাড়ী আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বিনা প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (গবেষণা) ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। এ জেলার জমি নিচু ও অনুর্বর। এখানে সাধারণত কৃষক একটি ফসল ফলিয়ে থাকে। এ জেলার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদ সম্প্রসারেণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বিনা খেসাড়ী ১ এ জেলায় প্রথম বছরেই কৃষককে রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। প্রচলিত জাতের খেসাড়ীতে মানব দেহের ক্ষতিকর বেটা অকজাইল এ্যামাইনো এলানিন মাত্রা অতিরিক্ত পরিমানে রয়েছে। পক্ষান্তরে বিনা ১ জাতের খেসাড়ীতে ওই উপাদান মানব দেহের সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। এটি মানব দেহের কোন ক্ষতি করবেনা। এ খেসাড়ী মানুষ নিরাপদে খেতে পারবেন। এ জাতের খেসাড়ী আবাদ করে কৃষক যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন, তেমনি লাভবান হবেন।

বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শেফাউর রহমান বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার কৃষক প্রতি হেক্টরে এ জাতের খেসাড়ী ১ হাজার ৯ শ’ কেজি উৎপাদন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের দেশে প্রতি হেক্টরে খেসাড়ীর গড় উৎপাদন মাত্র ৭ শ’ ৫০ কেজি। বিনা খেসাড়ী ১ বাংলাদেশর প্রচলিত যে কোন জাতের খেসাড়ীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়া এ জাতের বীজ আগামী বছরের আবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এটির আবাদ সম্প্রসারিত হলে সারাদেশে খেসাড়ী বিপ্লব ঘটবে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হরলাল মধু বলেন, গোপালগঞ্জে জেলার ৫ উপজেলায় ১০ হাজার ৬ শ’ হেক্টর জমিতে খেসাড়ীর আবাদ হয়। কৃষক বিনা ১ জাতের খেসাড়ী আবাদ সব জমিতে সম্প্রসারিত করলে এ জেলায় খেসাড়ীর উৎপাদন রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পাবে। কৃষক লাভবান হবেন।