সনৎ বসু’র কবিতা ‘ছুট’ শিল্প ও সাহিত্য / 
ছুটছে, সবাই ছুটছে
সকাল থেকে রাত
রাত থেকে মধ্যরাত
না ছুটে পার নেই
নইলে যে সবার পেছনে, এক্কেবারে পেছনে।
তাই ছোটার লাইনে সব্বাই
মা-বাবার হাত ধরে শিশু ছুটছে নামি স্কুলের মোহে,
স্কুলব্যাগ পিঠে কিশোর কিশোরী ছুটছে কোচিং ক্লাসের গোলক ধাঁধাঁয়,
ছাত্র ছুটছে ক্লাসে না গিয়ে কলেজ পরীক্ষা বসার দাবিতে,
ডিগ্রি গুটিয়ে যুবক ছুটছে ইট বালি সাপ্লাইয়ের ব্যবসায়,
সেলফোন হাতে যুবতি ছুটছে বিয়ে ও চাকরির বাজারে নিজেকে আপডেট রাখার নেশায়।
ছুটছে, সবাই ছুটছে
দু-গালে ছাত্রের থাপ্পর খেয়ে শিক্ষক ছুটছে কাউন্সিলের মীমাংসা বৈঠকে,
জনগণের সেবায় নেতা ছুটছে দু-নম্বরি কারবার থেকে চাঁদার ধান্দায়,
সি বি আই থেকে বাঁচতে মন্ত্রী ছুটছে হাইকোর্টের দরোজায়,
আর পুলিশ ছুটছে বিরোধী নেতাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর খেলায়।
ছুটছে, সবাই ছুটছে
কবিতা ছেড়ে কবি ছুটছে পুরষ্কার, সম্বর্ধনার লোভে,
রঙ তুলি ফেলে শিল্পী ছুটছে দলে উঁচু পাবার দৌড়ে,
রূপোলি নায়ক নায়িকা দেশোদ্ধার করতে ছুটছে লোকসভা বিধানসভায়,
নাট্যকার কাম বুদ্ধিজীবী ছুটছে দায়হীন বিশুদ্ধ শিল্পের চর্চায়।
অতি সংক্রামক এই ছুট রোগে আক্রান্ত আজ গ্রাম থেকে শহরের সংসার।
স্বামীকে লুকিয়ে স্ত্রী ছুটছে সদ্য পাতানো ফেসবুক বন্ধুর ডেরায়,
স্ত্রী অবর্তমানে স্বামী ছুটছে ম্যাসেঞ্জার বান্ধবীর চটুল ইশারায়,
ক্ষমতা খোয়ানো বৃদ্ধ ছুটছেন নব যৌবন লাভের যাদুকরী বটিকার মায়ায়।
অতিমানবিক এই ছুট তাই যতিহীন অবয়বহীন
ছুটে ছুটে ছুটে ছুটে
সবাই ক্লান্ত
অথচ কোন হিসেবই মেলে না
অগত্যা ফিরে চলা উৎসের কাছে
দেরিতে অনেক দেরিতে।
ততক্ষনে শেষ ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে বহুদূর
শুন্য প্লাটফরমে শুধু হাড়হিম নিঃসঙ্গতা।
আর উদ্গত কান্না
কলঙ্কিত সময়ের কান্না।।