Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

রাজবাড়ীতে ফসলী জমি নষ্ট করে বেড়েই চলেছে ভাটা রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে ফসলী জমি নষ্ট করে বেড়েই চলেছে ভাটা

রাজবাড়ীতে দিনদিন ফসলী জমি নষ্ট করে তৈরি করা হচ্ছে ইট ভাটা এতে করে কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য জমি গত এক বছরে রাজবাড়ী জেলায় নতুন ভাটা তৈরি হয়েছে ১৮ টি সব মিলিয়ে ভাটা রয়েছে ৮০ টি। এ সব ইট ভাটার বেশির ভাগেরই নেই কাগজপত্র।

রবিবার সকালে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী জানান, রাজবাড়ীতে বর্তমানে ৮০ টি ইট ভাটা রয়েছে এর মধ্যে ১৫ টির কাগজপত্র বৈধ, ৩১ টির হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে এসেছে বাকি ৩৪ টির কোন কাগজপত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের ছারপত্র কিছুই নেই। এ সময় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যে মতে। রাজবাড়ীতে মোট ইটভাটা আছে কমপক্ষে ১৫০ টি। এর মধ্যে অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে এবং আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাটা পরিচালিত হচ্ছে ৫৯ টি। অবৈধ ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করছে ২৭ টি। এগুলো বন্ধের নোটিশ দেওয়া হলেও উচ্চ আদালতে আপিল করে নোটিশের ওপরে স্থগিতাদেশ নিয়ে মালিকেরা ভাটাগুলো চালাচ্ছেন।

রবিবার দুপুরে সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার মদাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ফসলী জমি নষ্ট করে ৭৭৭ নামে একটি ইট ভাটা তৈরি হয়েছে। ইট তৈরির পর পোরানোর জন্য থরে থরে সাজানো হয়েছে সাথেই রয়েছে মসুর ও গম ক্ষেত। ভাটা গিয়ে মালিককে খুজলে পাওয়া যায়নি রহিম খা নামে এক শ্রমিক জানান, মালিক প্রতি সপ্তাহে একবার আসেন তার নামও বলতে রাজি হননি তিনি।

অপর দিকে জেলা সদররের এনআইবি ব্রিকস ও সরদার ব্রীকসে গিয়ে দেখা যায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এগুলোতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছ। ভাটার ওপরে ও চারপাশে কাঠ আর ডালপালা স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত লরিতে করে কাঠ আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। ভাটার পাশে স্থাপিত করাতকলে কাঠ চিরে ভাটায় ফেলা হচ্ছে। ভাটার চিমনি দিয়ে বেরোনো কালো ধোঁয়া চারদিকে দূষণ ছড়াচ্ছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার সরদার ব্রিকস গিয়ে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তি কাঠ ওজন দেওয়া এবং স্তুুপ করার কাজে ব্যস্ত। আনোয়ার মল্লিক নামের একজন নিজেকে কাঠ সরবরাহকারী পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রতিদিন এ ভাটায় ২০০-৩০০ মণ কাঠ লাগে। গড়ে প্রতি মণ খড়ির দাম ১১০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন এ ভাটায় ৩৩ হাজার টাকার কাঠ পুড়ছে।

একই উপজেলার এসআইবি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিদিন তাঁদের ভাটায় প্রায় পাঁচ টন কয়লা লাগে। কয়লার ওপর চাপ কমাতে কাঠ ব্যবহার করেন তাঁরা। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর নিয়ম নেই এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, অনেক সময় রাস্তার আশপাশের অনেক মরা গাছ লোকজন বিক্রি করে দেন। সাধারণত তাঁরা সেগুলো কেনেন। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর নিয়ম নেই। প্রতিবছর আমরা সব ইটভাটার মালিককে নোটিশ দিয়ে কাঠ পোড়াতে নিষেধ করছি। অবৈধভাবে কিছু প্রভাবশালী নতুন নতুন ভাটা তৈরি করছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। 

ফসলী জমিতে ইট ভাটা স্থাপন ব্যপারে রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন জানান, ইট ভাটা তৈরিতে ভাটা মালিকদের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে একটি প্রত্যায়ন পত্র নিতে হয়। নিয়ম হচ্ছে অনাবাদি জমিতে ইট ভাটা প্রস্তুত করা যাবে কিন্তু সেই নিয়ম না মেনে ইট ভাটা তৈরি করে কাজ শুরু হওয়ার পর আসে প্রত্যায়ন নিতে তখন আমরা গিয়ে দেখি ওই জমি আর আবাদযোগ্য নেই তখন প্রত্যায়ন দিতে হয়। 

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, জেলা প্রশাসন এ ব্যপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে নিয়ম না মানায় ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে গত মাসে জেলায় ৯ টি ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ১২ টি মামলা করা হয়েছে সেই সাথে সাড়ে চার লক্ষ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এই অভিযান আগামীতেও অব্যহত থাকবে।