Opu Hasnat

আজ ১৯ মার্চ মঙ্গলবার ২০২৪,

কুমার নদ এখন দখলে দখলে ভারাক্রান্ত, পুনঃখনন হবে অচিরেই ফরিদপুরবিশেষ সংবাদ

কুমার নদ এখন দখলে দখলে ভারাক্রান্ত, পুনঃখনন হবে অচিরেই

কুমার নদ নামেই যে নদীটি ছোট বড় সবার কাছে বড্ড বেশী পরিচিত। ফরিদপুর মূল শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদ যা কিনা শহরকে করেছে দুটি ভাগে বিভক্ত, বলা হয় নদীর এপার আর ওপার। তবে সেই নদীটির শহরের এপার ওপার দুপাশেই এখন ময়লা-আবর্জনা আর দখলে দখলে দূষিত হয়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি নদীটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নদী সংস্কারের জন্য ২৫০ কোটি টাকার ৮১ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। যার কাজ অতি দ্রুত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলার মন্ত্রী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। 
  
কুমার নদটির উৎপত্তি স্থল শহরতলির মদনখালী এলাকায় পদ্মা নদী থেকে। উত্তর দিক থেকে ফরিদপুর শহরে প্রবেশ করে শহরকে দুই ভাগ করে বিভিন্ন উপজেলা পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জের সেনদিয়া ঘাট এলাকায় বিলরুট ক্যানেলে গিয়ে পড়েছে নদটি।   

নদী পাড়ে সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেল, কুমার নদের দুই পারের জায়গা দখলদারদের কবলে চলে গেছে। বিশেষত ফরিদপুর শহরের ভেতরের ৯ কিলোমিটার অংশে দখল সবচেয়ে বেশি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, অন্তত ১ হাজার ৬০০ অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে দুই পারে। শহরের মদনখালী থেকে শুরু হয়েছে নদের পার দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। মদনখালী থেকে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকা পর্যন্ত সর্বত্র দখলের চিহ্ন। নদী দখল করে বসতবাড়ি, দোকানপাট যেমন হয়েছে, তেমনি মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা, বেকারিসহ হরেক করমের ছোট ও মাঝারি কারখানা, রয়েছে পৌরসভার গণশৌচাগারও। পৌরসভার তিনটি নর্দমার পানি কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে কুমার নদে। খননযন্ত্র বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলা হচ্ছে নদীর গহ্বর থেকে অনেক জায়গায়। ফলে বিভিন্ন এলাকায় কচুরিপানা জমে এঁদো ডোবার মতো হয়েছে কুমারের চেহারা। এ কারণেই নদী সংস্কারের দাবি উঠেছে অনেক দিন থেকে। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেল, ইতিমধ্যে নদ সংস্কারের জন্য ২৫০ কোটি ৮১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গত বছরের ১০ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পাস হয়েছে।  

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, কুমার নদ পুনঃখনন নামের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এই মাসের মাঝামাঝি এর কাজ শুরু করা হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর এই কাজের  উদ্ধোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন,  প্রল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নারায়নগঞ্জ ডর্কেয়াড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। নদী সংস্কার হবে মদনখলী, কুমার, মরা কুমার ও মান্দার তলা খালের মোট ১৩০ কিলোমিটার অংশ যার ব্যায় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকার ৮১ লাখ টাকা। কাজ শেষের সময় ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মূল কুমারের যে অংশ সংস্কার হচ্ছে, তার প্রথম পর্যায়েই উচ্ছেদ করা হবে দুই পারের অবৈধ দখল। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, জমা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছে। শহরের ভেতরের অংশে নদের দুই পাশে হাঁটার সড়ক তৈরি করা হবে। সংস্কারের ফলে নদীর পানি দূষণমুক্ত হবে। নদীতে গোসলের জন্য বিভিন্ন স্থানে ৬১টি পাকা ঘাট ও নারীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য ঘাটের পাশে ঘর নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে নদীকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি। 

ফরিদপুরের এনজিও ব্যাক্তিত্ব আজাহারুল ইসলাম বলেন, কুমার নদের পানির প্রবাহ বাড়াতে হলে দরকার পুরাতন আমলের সুইচ গেট গুলোকে সড়িয়ে নতুন সুইচ গেট নির্মান। এছাড়া কুমার নদের দুপাশে থাকা  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি এর উৎস পদ্মা নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি করা। যাতে করে এর উৎস মুখে পানির প্রবাহ বাড়ে।  তিনি বলেন, পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে নদের পানিপ্রবাহ বাড়বে ও কুমার তার হারানো যৌবনও ফিরে পাবে।