Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

বাপের খাইয়া পরেরে কইফত দেওয়াই কি মফস্বল সাংবাদিকতা ? মিডিয়াগোপালগঞ্জ

বাপের খাইয়া পরেরে কইফত দেওয়াই কি মফস্বল সাংবাদিকতা ?

আজ পাঠকদের জন্য একজন মফস্বল সাংবাদিক- সংবাদকর্মির জীবনযাত্রা বর্নানা তুলে ধরছি, আসলে এই পেশার মানুষ গুলো প্রকৃতপক্ষে পত্রিকার মালিক, রাষ্ট্র ও সমাজের নিকট থেকে কি পেয়েছে? কেন জানি খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি মফস্বলের কোন কোন সাংবাদিক সহকর্মী মাসের পর মাস বেতন পায় না। কেউ কেউ কিছু পায়। তবে যা পায়, তা একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতনের চেয়ে অনেক কম। আর্থিক টানা পোড়নে দিনের পর দিন চলে যায়, যায় রাতের পর রাত। তবুও ভাগ্য সহায় হয় না, কোন পরিবর্তন হয় না তাঁদের। এই অবস্থার জন্য কে দায়ী, যাঁরা এই পেশায় আসে তাঁরা? দেশের রাষ্ট্র যন্ত্র? নাকি আমাদের সাংবাদিক নেতারা?

এই অবস্থার উন্নতি না হলে মফস্বলে মেধাবী, সৎ, যোগ্য ছেলে-মেয়েরা আসবে এই মহান পেশায়? বলুন, কে জেনে শুনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াবে। দেশে একের পর প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়া আসছে। কেন আসছে, কারা আনছে, কি জন্য আনছে? দেশের জন্য? দশের জন্য? সমাজকে কিছু দেবার জন্য?

কিছুটা সময় ভেবেও এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনা। যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সংবাদকর্মীদের বেতন নয়, সম্মানীর নামেও কিছু দেয়না, তারা কি করে দেশ ও দেশের মানুষকে ভাল কিছু দিবে। দেশে মিডিয়ার জোয়ার চললেও এখন এমনও জেলা পাওয়া যায়, যেখানে মফস্বলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রতিনিধি খুঁজে পাওয়া যায় না। আর যাদের পাওয়া যায়, তারা মনে প্রাণে ব্যবসায়ি, নয়তো ঠিকাদার আর? বুঝে নিন। কিন্তু কেন মনে প্রাণে ভালবাসবে এই পেশাকে? যারা ভালবাসেন তারা কি ভাল আছে? কেন তারা ভাল থাকেনা, এই প্রশ্নের উত্তর কখনও কি জানা যাবে? হয়তো হ্যাঁ বা না। 

স¤প্রতি ঢাকায় চুরি হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার হওয়া এক শিশুর অভিভাবক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলেকে সাংবাদিক বানাবে। বেশ ভালো কথা, কিন্তু তিনি যেন ভুলেও তাঁর ছেলেকে মফস্বলের সাংবাদিক হিসাবে গড়ে না তুলেন। মফস্বল সাংবাদিকতা নিয়ে যেন কারো কথা বলতেই নেই, বলতে মানা, যদি বেতনহীন চাকরী চলে যায়! 

মফস্বলের সাংবাদিকতার কথা বললে এই মহান পেশার জাত যাবে, ধুলোয় মিশে যাবে আমার পেশা! তবুও বলছি, বলে যাবো। যদি এসব থেকে নিস্তার মেলে মফস্বলের সাংবাদিকতার, যদি আলোর মুখ দেখে কোন মফস্বলের সংবাদকর্মী, এই আশায় বুক বাঁধি সবসময়। 

সাগর রুনি হত্যাকান্ডের পর মফস্বলের সংবাদকর্মীরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে সারা দেশে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন- আমার ভাই মরলো কেন? জবাব চাই, জবাব চাই। নি:সন্দেহে এটা ভালো দিক, আমাদের এই মফস্বলের জোর গলার আওয়াজ সামনেও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু মফস্বলের কোন সংবাদকর্মী হত্যাকান্ডের শিকার বা নির্যাতনের শিকার হলে আমার ঢাকার বাঘা বাঘা সাংবাদিক নেতাদের আন্দোলন দূরে থাক, একটি বিবৃতি দিতেও দেখা যায় না। তাঁরা কেন এমনটি করেন? মফস্বলের আমরা কি অচ্ছুত?

ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে ওয়েজ বোর্ড এর দাবীতে সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। সে আন্দোলনে মফস্বলের সংবাদকর্মীদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আনার দাবী কখনো কোন সাংবাদিক নেতা করেছেন কিনা আমার জানা নেই। না করে থাকলে, কেন করেন না?

তবে হ্যা বাঘা বাঘা কোন সংগঠন নয় বর্তমানে একটি মাত্র সংগঠন কে আমরা দেখছি যারা মফস্বল সাংবাদিক দের দু:খ কষ্টের ভাগ নিতে রাজি মফস্বলে কিছু হলে তারা যেন ঘুমাতেই পারেন না ! মনের সব উজার করে প্রতিবাদ করছেন দিনের পরে দিন । সাংবাদিকদের দাবি আদায়ে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন করছে মাসের পর মাস । লক্ষ্য আর স্বার্থ একটাই ভালো থাকুক রাষ্টের ৪র্থ স্তম্ভ অবহেলিত মফস্বল সাংবাদিকরা । এই সংগঠনের নাম “বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফেরাম” দেশের সমস্থ অবহেলিত মফস্বল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ সংগঠনটি ও সংগঠনের পরিশ্রমী নেতাদের আমি সফলতা কামনা করছি! শুভ কামনা থাকবে আপনাদের প্রতি ।

আমি বলতে চাই? মফস্বলে সাংবাদিক-সাংবাদিকতা বলে কিছু আছে? যদি থাকে তাহলে কেন একই সুরে আওয়াজ উঠে না ৬৪ জেলায় ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন হোক, বেতন দেওয়া হোক ৬৪ জেলার সংবাদকর্মীদের, নয়তো বন্ধ করা হোক এসব প্রতিষ্ঠান। সরকার ঘোষিত ১৫৩ জন অসহায় সংবাদকর্মীর মধ্যে ঢাকার সংবাদকর্মীদের ১ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়। ৫০ হাজার করে প্রদান করা হয় বিভাগীয় শহর এবং কিছু জেলায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়া তথা অসচ্ছল সংবাদকর্মীদের তালিকার মধ্যে মফস্বলের কোন সংবাদকর্মীর স্থান নেই কেন? 

তাহলে কি সাংবাদিকতা করার ব্যয়বহুল আর ঝুঁকিপূর্ন এলাকা হিসেবে বিবেচিত মফস্বলের সাংবাদিকরা এখন বেশ সচ্ছল? মফস্বলের সংবাদকর্মীদের এতো উন্নয়ন, আমার ভাবতেই যেন ভালো লাগে! কে দেবে এর জবাব, রাষ্ট্র যন্ত্র, নাকি আমাদের সাংবাদিক নেতারা। টক শোতে আমাদের অনেক শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক নেতাকে বলতে দেখি শ্রমিকদের বেতন বৈষম্যের কথা, না পাওয়ার বেদনার কথা, অশ্রুসজল কান্নার কথা। কিন্তু নিজ প্রতিষ্ঠানের কথা তারা কি কখনও বলেন? বেতন না দিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর মফস্বলের সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার কথা। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করার কথা বলে দেশের অনেক পত্রিকা তাদের বিজ্ঞাপন রেট দ্বিগুণ করেছে। প্রশ্ন রইল, মফস্বলে এই ওয়েজ বোর্ডের নুন্যতম সুবিধা পান কতজন সংবাদকর্মী? 

কোন কোন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিরা অল্প-স্বল্প সম্মানি পেলেও উপজেলার সংবাদকর্মীদের মধ্যে কতজন এই নুন্যতম সম্মানির স্বাদ পায় সেটা না হয় নাই বললাম। বছরের অসহায়ত্বের দিনগুলো পাড়ি দিয়ে কোন উৎসবের দিন আসলেও অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বেতন পায় না। আর যেসব হাউজ বেতন দেয় তাঁরা আবার মফস্বলের কর্মীদের বোনাস দিতেই ভুলে যান! অনেকেই মনে করেন, মফস্বলের এসব সংবাদ শ্রমিকদের আবার কিসের উৎসব, তা না হলে কেনই বা এমন ঘটে মফস্বলের সংবাদকর্মীদের বেলায়। উৎসব আসলেই মফস্বলের অনেক সংবাদকর্মী রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে উৎসব পালন করার জন্য সহযোগীতার আশায় বসে থাকেন, এমন অসহায়ত্বের কথাও শুনি। কিন্তু এসব সংবাদকর্মীদের কেন নেতাদের পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে। কেন রাজনৈতিক নেতাদের হাতে চলে যাবে মফস্বলের সাংবাদিকতা, এর জন্য কারা দায়ী? 

জানতে হলে ভাবতে হবে, যেতে হবে যেন বহুদূর। মফস্বলের সংবাদকর্মীরা সংবাদ প্রকাশের জের ধরে কোন মামলা-হামলার শিকার হলে, বেশিরভাগ মিডিয়া প্রতিষ্ঠান মফস্বলের সংবাদকর্মীটির পেছনে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় না। কিন্তু কেন এমন আচরণ? কে দেবে এ প্রশ্নের উত্তর? তাহলে কি ভেবে নিতে হবে, হাউজগুলোর কাছে দেশের বিভাগীয় অফিস ব্যতিত পুরো মফস্বল অচ্ছুত! 

সংবাদকর্মীরা তাঁদের নিজ জেলার সংবাদ মাত্র একদিন যদি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দেয়, তখন দেশের মিডিয়াগুলোর কি হবে, একবার ভাবুন। না, এমনটা কখনও হোক স্বপ্নেও ভাবি না। স্বপ্ন দেখি একদিন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র যন্ত্র ও আমাদের সাংবাদিক নেতারা মফস্বলের কর্মীদের নিয়ে ভাববে। নিশ্চিত করা হবে মফস্বলের সাংবাদিকদের বেঁচে থাকার অধিকার। 

পরিশেষে, কোন সংবাদ-কর্মী টাকার আশায় সাংবাদিকতা করে না, সম্মান আর মানুষের ভালোবাসার জন্য সাংবাদিকতা করেন। সত্য ঘটনা তুলে ধরা, অসহায় মানুষের কথা বলাই সাংবাদিকের দায়িত্ব। দেশে যে সরকার ক্ষমতায় আসুক উন্নয়নের কথা কারা তুলে ধরেন বিশ্বের কাছে সাংবাদিক না অন্যরা। দেশের প্রতিটা কাজেই সাংবাদিকদের অবদান রয়েছে এবং আছে থাকবে যতদিন পৃথিবী আছে।

কিছু লোকের মুখে মাঝে মাঝে শুনতে পাই সাংবাদিকেরা চাঁদাবাজি করে।

এটা সম্পর্কে একটু জানি, কোন ব্যক্তি অপকর্ম করলে ১ হাজার টাকার উপরে কেউ ঘুষ দেয় না। তার আগেও নেতাদের হাত ধরে ফেলেন। আর সাংবাদিকরা তো আপনাদের মতো গরিব অসহায়সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কথা তুলে ধরেন। যখনি দেখেন পাচঁ টাকা পকেটে মধ্যে ভরে দিচ্ছে তখনি বলেন সাংবাদিক চাদাঁবাজি করছে। আর যারা দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তাদেরকে কিছু বলতে পারছেন না। আসলে সমান চোখে দেখুন। একজন সংবাদকর্মী কতটা কষ্ট করে তা আপনি জানেন না? কখনো যদি জানতেন  তাহলে এইভাবে কথা বলতেন না।রোদ্র নেই বৃষ্টি নেই, পানি নেই ২৪টি ঘন্টা গাধাঁর মতো খেটে থাকে।

কোন লোককে জীবনে দেখছেন কোমড় সমান পযন্ত পানিতে নেমে অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরতে সবাই এসির রুমে বসে বাতাস গ্রহণ করছে আর সাংবাদিক পানিতে নেমে সংবাদ সংগ্রহ করছে।একটি বারো কি ভেবে দেখেছেন আপনারা?

প্রশ্ন রেখে গেলাম সচেতন সমাজ! দেশ, জাতি ও সরকারের প্রতি ! অপেক্ষায় থাকবো উত্তরের । ভালো থাকুন সবাই ! ভালো থাকুক আমার অসহায় মফস্বল সাংবাদিক ভাইয়েরা।