Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা কৃষি সংবাদ

ব্রোকলি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

কৃষিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত টুঙ্গিপাড়ার কৃষক শক্তি কির্ত্তনীয়া গত চার বছর ধরে নতুন জাতের সবজি ব্রোকলি ফলিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ৪ বছর আগে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বর্ষা শেষ হতে না হতেই জমিতে নতুন জাতের এ সবুজ সবজি লাগান। ফলনও পান ভালো। আর দামও ভালো পেয়ে তিনি প্রতিবছরই এর চাষ করে আসছেন। দেখতে ফুলকপির মতো হলেও ভিন্নতা রয়েছে রং-য়ে ও স্বাদে। ফুলকপি দেখতে সাদা আর ব্রোকলি দেখতে সবুজ। ব্রোকলি চাষ করে ভালোই মুনাফা করছেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষকই ব্রোকলি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং অনেক চাষী অল্প জমিতে এর চাষও করেছেন।

সেই ৪ বছর আগের কথা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের পিএইচডি ফেলো কৃষিবিদ অসিত বরণ মন্ডল-এর তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শে বর্ষাকালে ভাসমান ধাপের উপর বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছিলেন এই কৃষক। পানি শুকিয়ে গেলে সেই ধাপই অপেক্ষাকৃত উচু জায়গায় ফেলে সেখানে তিনি ব্রোকলি চাষ করেন। ব্রোকলির বীজও এনে দেন ওই কৃষিবিদ। দেখতে ঠিক যেন ফুলকপি। গাছ-পাতা দেখলে সবাই মনে করবে এটা ফুলকপি। কিন্তু, যখন ফুল আসে তখন তা সাদা না হয়ে সবুজ থাকে।

কৃষিবিদ অসিত বরণ মন্ডল জানান, ব্রোকলির এ জাতটি ইতালি থেকে আসা। ১৮০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ইতালিয়ানদের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে আসে। ব্রোকলি ইতালিয়ানদের কাছে অতি প্রয়োজনীয়ও প্রিয় সবজি হিসেবে পরিগণিত।

এ সবজি যেমন পুষ্টিমান সমৃদ্ধ, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। তা’ছাড়া ক্যানসার সেল বা কোষকে (ক্যানসারের উপকরণ) ধ্বংস করে। এতে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলোই কাজ করে ক্যানসার সেলের বিরুদ্ধে।

কোনো সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই টুঙ্গিপাড়ার গ্রামের এ কৃষক ব্রোকলি চাষ করে প্রতি বছর প্রচুর আয় করে থাকেন। নতুন সবজি হিসেবে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। তবে নতুন সবজি অনেকে খেতে না চাইলেও যারা একবার খেয়েছেন তারা আবারো খুঁজে ফেরেন। স্বল্প তাপে সিদ্ধ হওয়া ব্রোকলি বড় শহরের নামি-দামি হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি হয়ে থাকে।

চাষি শক্তি কির্ত্তনীয়া বলেন, ৪ বছর আগে আমি কৃষিবিদ অসিত বরণ মন্ডলের সহযোগিতায় ১ হাজারটি ব্রোকলি চারা লাগিয়ে ছিলাম। আমার এতে খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করে ভাল লাভবান হয়েছিলাম। এরপর থেকে প্রতিবছরই আমি আমার ওই ১০ কাঠার এক খণ্ড জমিতে ব্রোকলি চাষ করে আসছি এবং ভালই লাভবান হচ্ছি।

এলাকার কৃষক রবীন কিত্তনীয়া, আমিনুর ইসলাম ব্রোকলি চাষের এ সাফল্য দেখে নিজেরাও ব্রোকলি চাষ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, সমস্যা হলো এর বীজ কোথায় এবং কিভাবে তারা পাবেন তা জানেন না। বীজ পেলে এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক আকারে ব্রোকলি চাষ করে জেলার বাইরেও তা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, এখানকার জমিতে ব্রোকলি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

উন্নতমানের এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ফসলের চাষ করে এলাকার কৃষকেরা লাভবান হতে পারবে। বীজের জন্য কৃষকদেরকে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।