Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

ভোলারই সন্তান সে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎর্সগ করেছে মুক্তিবার্তাভোলা

ভোলারই সন্তান সে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎর্সগ করেছে

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলেন মোস্তফা কামাল। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল তিনি সৈনিক হওয়ার। এতে রাজি হননি তার বাবা হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান তখনকার সেনাবাহিনীতে একজন হাবিলদার ছিলেন। 

কিন্তু একরোখা আর ডানপিটে স্বভাবের মোস্তফা বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। প্রথমেই তার পোস্টিং হয় কুমিল্লা সেনানিবাসে। ১৯৭১-এর মার্চের মাঝামাঝি ৪র্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠানো হয়। 

২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর মেজর শাফায়াত জামিল তার গুটিকয়েক বাঙালী সেনা সদস্য নিয়ে পাক অধিনায়ক লেফট্যান্টে কর্নেল খিজির হায়াত খান পাকিস্তান সেনাদের নিরস্ত্র করে বন্দী করেন। এই মিশনে অংশগ্রহণ করেন সিপাহী মোস্তফা কামাল। চারদিকে একে একে শুরু হয় প্রতিরোধ। 

সিপাহী মোস্তফার সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা দেখে মেজর শাফায়াত জামিল তাকে যুদ্ধকালীন ল্যান্সনায়েকের দায়িত্ব প্রদান করেন। মোস্তফা কামাল ১০ সৈন্যের সেকটর কমান্ডার হন। 

১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে চিহিত করার জন্য কমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উওরদিকে অগ্রসর গতে থাকেন। ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী দরুইন এলাকায় পৌছে মুক্তিযোদ্ধাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। 

এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাৎপদতা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। দলের সবাই পিছু হটলেও আসেননি মোস্তফা কামাল। এলএমজি দিয়ে গুলি করতে করতে পাকিস্তানি বাহিনীর তটস্থ রাখেন তিনি। এরই মাঝে বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে স্থান ত্যাগ করেন। পাকিস্তানি বাহিনী এলাকা ছেড়ে চলে গেলে মোস্তাফা কামালকে খুঁজে না পেয়ে পুনরায় দরুইনে আসেন মেজর শাফায়াত জামিল। দেখেন গুলি ও বেয়নেটের দাগ নিয়ে মাটিতে পরে আছেন মোস্তফা কামাল। তার আত্মত্যাগের কারণে বেচে যায় বাকি মুক্তিযোদ্ধারা।

এলাকাবাসী সেখানই এই বীরকে সমাহিত করেন। বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি : মুক্তিযুদ্ধে মহান ত্যাগ ও বীরত্বের জন্য বীরশ্রেষ্ঠের ময্যাদা পেয়েছেন মোস্তফা কামাল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৭ শহীদকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়। 

ভোলার মোস্তফা কামাল তাদেরই একজন। মোস্তফা কামালের মা মালেকা বেগম বলেন, আমার ছেলের সাহস ও ত্যাগ নিয়ে আমি গর্ব করি। আমি এমন একজন ছেলেকে আমার গর্ভে ধরেছি যে অনেক আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু আজও তাকে এ দেশের মানুষ ভোলেনি আর ভুলবেনা। 

তিনি আরো বলেন, মোস্তফা দেশের জন্য হাসিমুখে তার জীবন দিয়েছেন। এ দেশের মানুষ কোনো দিন তাকে ভুলবে না। বর্তমানে ভোলা সদরের আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামে বাস করেন মোস্তফা কামালের বৃদ্ধা মাসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। 

এব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ভোলাবাসীরা অত্যন্ত পর্বিত যে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল এই ভোলারই সন্তান। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎর্সগ করেছে। তিনি আরো বলেন, আমি সর্বক্ষণ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিচ্ছি তাদের ভিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।