Opu Hasnat

আজ ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৪,

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কুকুর ও সাপে কামড়ানো ভ্যাকসিন সংকট স্বাস্থ্যসেবাঝালকাঠি

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কুকুর ও সাপে কামড়ানো ভ্যাকসিন সংকট

বর্ষা কাল শুরু হচ্ছে। চারিদিকে বর্ষাকালের বৃষ্টির পানিতে এবং নদীর মাত্রাতিরিক্ত পানি বৃদ্ধিতে থই থই করবে। আর এসময় জীব বৈচিত্রের অন্যতম প্রাণী সাপের উপদ্রবও বৃদ্ধি পাবে। সাপে কামড়ানোর রোগিদের বাঁচাতে প্রয়োজন হয় ভ্যকসিন। কিন্তু ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে সাপে কামড়ানো রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন মজুদ না থাকায় হতাশায় জেলা শহরের প্রত্যন্ত নিন্মঞ্চলের মানুষ। অপরদিকে কুকুরের প্রজনন মৌসূম আসতে না আসতেই বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবও বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরে কামড়ানো রোগিদের পুশ করার জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুদ না থাকায় চিন্তিত শহরের সচেতন মানুষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগিদের জন্য ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে ৬৯ পিস। একেকটি ভ্যাকসিন দিয়ে ৪ জনকে পুশ করা যায়। কিন্তু প্রতি জনের জন্য ৭ বার পুশ করা প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে সাপে কামড়ানো রোগিদের জন্য ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে ৩৫ পিস। যা আশংকার তুলনায় অপ্রতুল। 

সরেজমিন শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। কুকুরের অবাধ বিচরণ ও দৌড়াদৌড়ির কারণে সকালে স্কুল পড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ চরম আতঙ্কে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ তিন মাস কুকুরের প্রজনন মৌসুম থাকার কারণে এর পূর্ব থেকেই কুকুরগুলো উত্তেজিত আচরণে দল বেধে চলাচল করছে। শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় উপর ৫ টি থেকে শুরু করে ১২টি পর্যন্ত একদলে চলাচল করছে। দেখলে মনে হবে রাস্তাটি কুকুরদের দখলে রয়েছে।

পরিবেশের ভারসাম্য এবং প্রাকৃতি জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকার কর্তৃক কুকুর নিধনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রদানের কর্মসূচী গ্রহণ করে। কর্মসূচী অনুযায়ী গত বছরের জুলাই মাসে ঝালকাঠি শহরের কুকুরদেরকে জীবানু মুক্ত করার জন্য ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। কুকুরের ঘ্রাণ ও শ্রবণ শক্তি তীক্ষ থাকায় সব কুকুরকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ভ্যাকসিন দেয়া কুকুরগুলোর গলায় তাৎক্ষনিক রং মেখে দিয়ে চিহ্নিত করলেও কয়েকদিনের মাথায় রং উঠে যায়। তাই কোন কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছিল তার চিহ্ন না থাকায় সব কুকুরকেই ঝুকিপূর্ণ মনে করছে সচেতন মহল। এমতাবস্থায় গৃহপালিত কুকুরসহ সকল কুকুরকে পুনরায় ভ্যাকসিন দিয়ে জীবানু মুক্ত করার দাবী জানিয়েছে শহরবাসী। 

ঝালকাঠি সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, কুকুরে ঘ্রাণ ও শ্রবন শক্তি তী² থাকায় একটি কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলে পাশে থাকা অন্য কুকুরগুলো দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। এমনকি খালে অথবা নদীতে নেমে সাঁতার দিয়ে অন্যপাড়ে উঠে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। বর্তমানে রাস্তাঘাটে কুকুরের আক্রমনাত্মক আচরণ থাকে। এসময় কুকুরে কামড় দিলে জলাতঙ্কসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মানসকৃষ্ণ কুন্ড বলেন, সাপে কামড়ানো রোগিদের প্রাথমিকভাবে কি ধরণে সাপে কামড়িয়েছে? সেটি বিষাক্ত কি না? সাপের কামড়ের মাত্রা এবং তীব্রতার ধরণ কি? শরীরে কি পরিমাণ বিষ রয়েছে? এটা সনাক্ত করতে ঝালকাঠিতে কোন ল্যাবরেটরী নেই। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের এ অঞ্চলে শতকরা ৮০ ভাগই দেশী সাপ। যাদের বিষের তীব্রতা কম। আর ২০ ভাগ বিষধর সাপ। তীব্র বিষধর সাপে কামড় দিলে দুটি দাঁতের দাগ পাশাপাশি থাকে। চোখে ঝাপসা দেখে, মাথ্যা ব্যাথা ও বমি হয়। এসময় কামড়ানো রোগির ক্ষতস্থানের উপরিভাগে সুতি কাপড় দিয়ে বেধে দিতে হবে। যাতে করে হৃৎপিন্ডের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তবে যে স্থানে ক্ষত হয়েছে সে অঙ্গটি বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে এখন যারা চিকিৎসা সেবায় রয়েছে তারা বেশিরভাগই নবীন। তাঁদেরকে সাপে কামড়ানো রোগিদের বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষন দিলে বর্ষা মৌসূমে কমবেশি সাপে কাটা রোগির সেবা দিতে পারতো। 

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, কুকুরে কামড়ানো ভ্যাকসিন অনেক কম রয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন চেয়ে চিঠি দেয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে।

এই বিভাগের অন্যান্য খবর