Opu Hasnat

আজ ১৯ এপ্রিল শুক্রবার ২০২৪,

বশেমুরবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে অচলাবস্থা : ৮ শিক্ষার্থী বহিস্কার শিক্ষাগোপালগঞ্জ

বশেমুরবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে অচলাবস্থা : ৮ শিক্ষার্থী বহিস্কার

ইংরেজি বিভাগের এম এ শেষ পর্বের ৮ শিক্ষার্থী বহিস্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিঃশর্তে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে ইংরেজি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে।

আন্দোলনরত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষায় বসতে দেয়া হবে না বলে শিক্ষকরা হুমকি দিচ্ছেন। অপর দিকে শিক্ষকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে বলেছেন, ক্লাস করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে তারা বাধা দিচ্ছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ফেসবুকে লেখালেখির ঘটনায় এম এ শেষ পর্বের শিক্ষার্থী চয়ন মল্লিককে গত ৩১ মে বহিস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করতে বলে। চয়ন ১ জুন নোটিশের জবাব প্রদান করে। কারন দর্শানোর ৩ দিনের মধ্যে চয়নের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্ত দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও তা দেয়নি। এ ছাড়া এম এ প্রথম পর্বের স্থগিত পরীক্ষা দ্রæত গ্রহনের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের সব ক্লাস রুমে তালা দিয়ে নিঃশর্তে চয়নের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার ও স্থগিত পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একাডেমিক কমিটি ওই বিভাগের এম এ শেষ পর্বের শিক্ষার্থী জাবির আহম্মেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মাহবুবুর রহমান রোমান, মনিরা ইয়াসমিন, সজল সরকার, আজাদ আলী ও মাসুদ রানাকে বহিস্কার করে।

বহিস্কৃত পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান রোমান জানান, নিঃশর্তে ৮ শিক্ষার্থীর বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার, স্থগিত পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা, স্বল্প সময়ে সেমিষ্টার পরীক্ষার ফল প্রকাশ, বিভাগীয় সমিতির নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের হাতে প্রদান, সেমিনার কক্ষে কম্পিউটার ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করার দাবিতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন কর্মসূচী শুরু করে।

বহিস্কৃত শিক্ষার্থী সজল সরকার জানান, গত ৩১ মে আমাদের প্রথম সেমিষ্টারের ৩টা পরীক্ষা শেষে অন্তত ৫ জন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারপর আমরা বাকী ৩টি পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানাই। এক পর্যায়ে বিভাগের একাডেমিক কমিটি আমাদের ৩টি পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়।

বহিস্কৃত শিক্ষার্থী জাবির আহম্মেদ অভিযোগ করে জানায়, আন্দোলন প্রত্যাহার না করলে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষায় বসতে দেয়া হবে না বলে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের আল মামুনসহ শিক্ষকরা হুমকি দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের আল মামুন বলেন, ২য় বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি রিকব বৈদ্যকে ফোন করে সবাইকে নিয়ে ক্লাসে আসার কথা বলেছি। এখানে কোন প্রকার হুমকি প্রদান করিনি। হুমকির অভিযোগ মিথ্যা। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা সকালে ক্লাসে গেলেও শিক্ষার্থী না থাকায় তারা ক্লাস রুম থেকে ফিরে আসেন।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূইয়া বলেন, চয়ন ফেসবুকে আমাকে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে পরীক্ষার মধ্যে অশোভন লেখালেখি করেছে। এ কারণে তাকে বহিস্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। পরে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় গত ১ জুনের পরীক্ষা ৪ জুন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৪৮ শিক্ষার্থী ৪ জুনের পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরে তারা ৭ জুন ও ৯ জুনের পরীক্ষায়ও অংশ গ্রহনে বিরত থাকে। চয়নের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার না হলে তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে না বলে জানায়।

তিনি আরো বলেন, গত ১২ জুন একাডেমিক কমিটির সভার শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখিয়ে এ পরীক্ষা আর নেয়া হবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ঘটনায় তারা ক্লাস রুমে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচী শুরু করে। আমরা সকল বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু কোন বর্ষের শিক্ষার্থীরা আসেনি। আমরা একাডেমিক ভবন থেকে নেমে প্রশাসনিক ভবনে যাওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী আমাদের সাথে কথা বলে। পরে আন্দোলনকারীরা তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে লাঞ্ছিত করে। এ ছাড়া তারা শিক্ষকদের কথা অমান্য করে ফেসবুকে বিভ্রান্তি মূলক লেখালেখি করে। এতে একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে প্ররোচিত করায় ৭ শিক্ষার্থীর ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমিক কমিটি। তারা আন্দোলন অব্যাহত রখেছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে সমাধানের চেষ্টা করছি।