Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

খাগড়াছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় কেন্দ্রীয় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী য়ংড বৌদ্ধ বিহারসহ ৯টি উপজেলার বিভিন্ন বিহারে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় য়ংড বৌদ্ধ বিহার প্রাংগনে বৌদ্ধ ধর্মীয় দায়ক-দায়িকারা বৃন্দ দল বেধে নারী পুরুষ সকলে পৃথকভাবে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহন করে। বছরের যে কোনো দিন কিংবা বছরের প্রতিদিনই পালন করা গেলেও বৌদ্ধদের পরম কল্যাণময় ও পুণ্যময় তিথি আষাঢ়ী পূর্ণিমা। প্রাচীন প্রথা হিসেবে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে পঞ্চশীল ও অষ্টশীল বৌদ্ধ দেশনা শ্রবন মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালন করা হয়ে থাকে। 

মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন করে শুভ আষাঢ়ী পুর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে ছোয়াং দান, মহা সংঘদান উৎসর্গ ও মঙ্গলময় প্রার্থনা সদ্ধর্ম সভায় দায়ক-দায়িকাদের পঞ্চশীল প্রার্থনা প্রদান করেন য়ংড বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ ভান্তে অগ্রবংশ মহাথেরো ও ধর্ম দেশনা দেন গুগড়াছড়ি গিরি অরণ্যকুটির ভান্তে উপসেন মহাথেরো।

শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বুডিষ্ট কল্যাণ পরিষদ আষাঢ়ী পূর্নিমা উদযাপন কমিটির আহবায়ক মংমংশি মাষ্টার সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত ধর্মীয় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোয়াইঅং মারমা, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব থোয়াইহ্লাপ্রু চৌধুরী, বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ম্রাসাথোয়াই মারমা। এ সময় জেলার বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষ দায়ক-দায়িকারা অংশ গ্রহন করে।

অনুষ্ঠান সুচীর মধ্যে সকাল ১০টায় পঞ্চশীল  ও অষ্টশীল গ্রহন, বুদ্ধ মুর্তি দান, বেলা ১১টা ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা-হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও উৎসর্গ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে।

এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টায় দিকে বৌদ্ধ মূর্তি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা জন্য সকল দায়কদায়িকারা  ডাবে পানি ও চন্দন পানি নিয়ে য়ংদ বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ মূর্তি স্নান করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মালম্ভীদের বিশ্বাস বৌদ্ধ মূর্তিকে ডাব, চন্দন পানি স্নান পূজা করাতে পারলে মন শান্তি  লাভ করা যায়। 

শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতেই তথাগত গৌতম বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য তিন মাস বর্ষাব্রত ও তপস্যা নিয়মও প্রবর্তন করেন। এসব প্রেক্ষাপটে আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মালম্ভীদের অত্যন্ত স্মরণীয় দিন। বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, বৌদ্ধ জীবন নানা কারণে ঐতিহাসিকভাবে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধার্থ রূপে মায়াদেবীর গর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন।

এক্ষেত্রে মহামানব সিদ্ধার্থ গৌতম বৌদ্ধ যথানিয়মে তাঁর পিতা রাজা শুদ্ধোধনের ঔরশে রাণী মহামায়ার গর্ভে জন্ম নিয়ে ধরাধামে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। জম্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু, সন্ন্যাসী এই চার নিমিত্ত দৃশ্য দর্শন করে রাজকুমার সিদ্ধার্থ এ তিথিতে সংসারের মায়া মোহ ছিন্ন করে বুদ্ধত্ব লাভের প্রেরণায় গৃহত্যাগ করেন। ছয় বছর কঠোর তপস্যার মাধ্যমে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমাতেই বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত(ওয়া) অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন।

যেহেতু, বর্ষাকালে ভিক্ষুদের গৈরিক বসন বা চীবর বৃষ্টিতে ভিজে ও মাটি-বালি লেগে নোংরা হয়, রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে পিচ্ছিল হলে পথ চলায় বিঘ্ন ঘটে। সবুজ ঘাস, লতা, ক্ষেতের আইল, জমির ফসল ইত্যাদি ভিক্ষুদের পদাঘাতে বিনষ্ট হয়। এ ছাড়া এ সময় পদতলে পিষ্ট হয়ে পোকামাকড়, কীট-পতঙ্গ ও অন্যান্য ছোট ছোট প্রাণীর জীবন নাশেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। 

এরপর থেকে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পরদিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিহারে বাইরে কোন জায়গা গেলে রাতের বিহারে এসে তপস্যা সাধনা করতে হবে এবং তিন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা-সাধনায় ব্রত থাকবেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা ও বর্ষাবাসের কার্যক্রমের সঙ্গে উপোসথ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বৌদ্ধ ধর্মে উপোসথের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মীয় জীবনযাপনের লক্ষ্যে তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ স্বয়ং উপোসথের প্রবর্তন করেন। উপোসথ হল ধর্মীয় অনুশাসন বা জীবনযাপনের তপস্যা সাধনা প্রশিক্ষণ।

উল্লেখ্য যে,  সিদ্ধার্থ গৌতম গৃহত্যাগের পর নিজের চুল কেটে সত্যক্রিয়া করে সেগুলো আকাশে উড়িয়ে দিলে দেবতারা সেই চুল নিয়ে স্বর্গে চৈত্য তৈরি করেন। এটি স্মরণে বৌদ্ধরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী বা প্রবারণা পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাবাস পর আকাশ প্রদীপ বা ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জগতের সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি মংগলময় কামনা করে।