Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৫ সারাবাংলা

তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় পাহাড় ধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িছে ১২৫ জনে।

তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব জি এম আবদুল কাদের মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গণমাধ্যমকে জানায়, পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২২ জন পাহাড় ধসে এবং বাকিরা গাছচাপায় মারা যান। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ৫৮ জন ও বান্দরবানে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।

তবে ওই সময় পর্যন্ত স্থানীয় কর্মকর্তারা রাঙামাটিতে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে ৭জন নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।

রাঙামাটি : পাহাড় ধসে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে। সদর, কাউখালী, কাপ্তাই, জোড়াছড়ি, বিলাইছড়ি উপজেলায় ৮৮ জনের লাশ উদ্ধারের খবর জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি জানান, রাঙামাটি সদরে ৪৫ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৬ জন, জোড়াছড়িতে ২ জন এবং বিলাইছড়িতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম : টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ও দেয়াল ধসে এবং বজ্রপাত ও গাছচাপায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান ও বাঁশখালীতে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার জানিয়েছেন।

এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার দুটি এলাকা থেকে ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মইন্যারটেক ও পাহাড়তলী ঘোনায় ১৩ জন এবং রাজানগর ইউনিয়নের জঙ্গল বগাবিল ৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।

“উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ওই দুই ইউনিয়ন। ফলে উদ্ধারকর্মীদের সেখানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন।”

ইসলামপুর ইউনিয়নে নিহতদের মধ্যে ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- শেফালী বেগম,  মো. হোসেন, মো. পারভেজ, রিজিয়া বেগম, মুনমুন আক্তার, হিরু মিয়া, মো. সুজন, তার স্ত্রী মুন্নী আক্তার, ফালুমা আক্তার, জোৎস্না আক্তার ও মীম আক্তার।

আর রাজানগরে মারা গেছেন- নজরুল ইসলাম কালু, তার স্ত্রী আসমা আক্তার, তাদের সন্তান মঞ্জুরুল ইসলাম ও সাথী আক্তার, মো. ইসমাঈল, তার স্ত্রী মনিরা খাতুন, তাদের সন্তান ইশা মনি ও ইভামনি। 

ওই দুই এলাকা থেকে লোকজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে বলে ইউএনও কামাল হোসেন জানান। 

এদিকে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় পাহাড় ধসের দুটি ঘটনায় দুই পরিবারের শিশুসহ চারজন মারা গেছেন বলে চন্দনাইশ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান।

ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ চৌধুরী জানান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড় ধসে আজগর আলীর তিন বছর বয়েসী মেয়ে মাহিয়ার মৃত্যু হয়।

আর কাছেই ছনবনিয়া এলাকায় অপর ঘটনায় কেউ লা খেয়াং, মে মাউ খেয়াং ও মোকইউ অং খেয়াং নামে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। সেখানে আহত হন শানু খেয়াং ও ছেলাই কেউ খেয়াং।

এর বাইরে নগরীর হালিশহর ও বাকলিয়, রাউজান, বাঁশখালীর বাহারছড়ায় নদীতে ভেসে গিয়ে, গাছ ও দেয়াল চাপায় এবং বা বজ্রপাতে পাঁচজন মারা গেছেন বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

বান্দরবান : বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে সোমবার রাতে কয়েক জায়গায় পাহাড় ধসে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা।

এর মধ্যে শহরের কালাঘাটায় এক কলেজছাত্র, লেমুঝিরি ভিতর পাড়ায় একই পরিবারের ৩ শিশু এবং সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু সম্বোনিয়া পাড়ায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। 

বান্দরবান সদর থানার ওসি রফিক উল্লাহ জানান, শহরের কালাঘাটা কবরস্থান এলাকায় মাহমুদ মিয়ার বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়লে সেখানে রেবি ত্রিপুরা নামের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যু হয়।

ওই বাড়ির মালিক মাহমুদ জানান, রাত ৩টার দিকে হঠাৎ করেই পাহাড় ধসে পড়লে তাদের বাঁশ-টিনের ঘরের এক-চতুর্থাংশ মাটিচাপা পড়ে।

রেবি বান্দরবান সরকারি কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তারা কয়েকজন সহপাঠী মিলে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভোর ৪টার দিকে মাটি সরিয়ে রেবির লাশ উদ্ধার করে এবং আরও চারজনকে হাসপাতালে পাঠায়।

কাছাকাছি সময়ে শহরের লেমুঝিরি ভিতর পাড়ায় একই পরিবারের ৩ শিশুর মৃত্যু হয়।

এরা হল- শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫) । তারা স্থানীয় সুমন বড়ুয়ার ছেলেমেয়ে।

ওই বাড়ির ওপর পাহাড় ধসের পর স্থানীয় লোকজন মাটি সরিয়ে তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করে।

এছাড়া বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু সম্বোনিয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে মংক্যউ খিয়াং (৫৫), ক্যসা খিয়াং (৭), নেইমাউ খিয়াং (১৭) নামে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য উসামং খেয়াং জানান।

সদর থানার ওসি রফিক উল্লাহ জানান, শহরের জাইল্লাপাড়ায় আরেক ঘটনায় কামরুন্নাহার নামের এক নারী ও তার ১০ বছরের মেয়ে সুফিয়া নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।