Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

নাটোরের হালতি বিল ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এখন ‘মিনি কক্সবাজার’ নাটোরবিশেষ সংবাদ

নাটোরের হালতি বিল ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এখন ‘মিনি কক্সবাজার’

নাটোরের হালতি বিল এখন ভ্রমন পিপাসুদের কাছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। দেশের বৃহত্তম বিল হিসেবে পরিচিত চলনবিল ছাড়াও নাটোরে রয়েছে এই হালতি বিল। নাটোরের নবগঠিত নলডাঙ্গা উপজেলার একপ্রান্তে প্রায় ৪০ হাজার একরের বিস্তির্ণ এলাকা জুরে এর অবস্থান। ব্রিটিশ সরকারের সময়ে এই বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে বিরল প্রজাতির ‘হালতি’ পাখী বসতো বলেই এর নামকরণ করা হয়েছিল হালতি বিল। তখন ব্রিটিশ সরকারের লোকজন এই বিলে আসতেন সেই হালতি পাখী শিকারে। আর দীর্ঘদিন পরে আবার এখন সবাই আসেন এই বিলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করতে। বর্ষা মৌসুমের প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষ হালতি বিলে আসেন এই বিশাল জলরাশীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। আগে যখন এই বিল পানিতে টই টম্বুর করতো তখন বিল এলাকার খোলাবাড়িয়া, হালতি, দীঘিরপাড়, একডালা, কুচকুড়ি, চানপুর ও খাজুরা গ্রামের হাজার হাজার মানুষ জরুরী প্রয়োজনে নাটোর সদরে আসতে হলে শুকনা মৌসুমে নলডাঙ্গা হয়ে ট্র্রেন বা সড়ক পথে আর বর্ষা মোসুমে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিল দিয়ে নৌকায় চলাচল করতেন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি সরকার নাটোরের পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সাবমার্সিবল রোড (ডুবো সড়ক) নির্মানের উদ্যোগ নেয়। এলজিইডি মোট সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আরসিসি রাস্তাটি এবং সড়ক ও জনপথ প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যায়ে দু’টি ছোট ব্রীজ নির্মান করে। ২০০৫ সালে তদানিন্তন ভুমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু দেশের প্রথম এই সাবমার্সিবল সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আরসিসি ঢালাই করা দশফুট চওড়া এই রাস্তাটির বৈশিষ্ট হলো বন্যার পানির সময়ে রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেলেও শুকনো মৌসুমে আবারও জেগে ওঠে। সে সময় ওই রাস্তার ওপর দিয়েই গাড়িতে চলাচল করতে পারে। সেই থেকে ওই রাস্তা দিয়ে মানুষের যাতায়াতও বেড়ে যায়। এরপর প্রতিবছর সেই আসাটা বাড়তে থাকে। বর্ষায় শুরু হয়ে গেলে পাকা রাস্তার ওপর দিয়েই নৌকার চলাচল শুরু হয়ে যায়। বর্ষাকালের হালতি বিলটি অথৈ সমুদ্রের মতোমনে হয়। এসময় বিলের মাঝে মাঝে ছোট গ্রামগুলো প্রায় ডুবুডুবু একটি দ্বীপ মনে হয়। বিলের বড় বড় ঢেউ সেখানে আছড়ে পড়ে। আগে ঝড়ের সময় কত যে নৌকাডুবি হয়েছে এখানে। এই রাস্তা নিমার্ণের ফলে এখন যেন পুরোপুরি বদলে গেছে দৃশ্যপট। পানি বাড়তে থাকলে প্রথমদিকে নৌকা ভ্রমনের জন্য শহর থেকে কিছু কিছু লোক ওই বিলে বেড়াতে আসতে শুরু করেন। নাটোর শহর থেকে হালতি বিলের দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। শহর থেকে নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও সিএনজি আর অটোরিক্স্রায় করে বিল দেখতে আসেন। ভ্রমন পিপাসু অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকেও আসেন। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য বিলে নামানো  হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য নৌকা। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে এই বিলে নেমেছে বেশ কয়েকটি স্পীড বোটও। প্রতিবছর বর্ষায় সড়কটি পানিতে ডুবতে শুরু করলেই ভ্রমন পিপাসুদের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ বিলের দক্ষিণ প্রান্ত পাটুলের বটতলায় আসেন হালতি বিল ভ্রমনে। সপ্তাহের বন্ধের দিগুলোতে এখানে সবচেয়ে বেশী ভিড় হয়। এবারের ঈদুল ফিতরের পর থেকে এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। দুপুরের পর শহর থেকে দলে দলে মানুষ পাটুল আসতে থাকেন। তাদের অনেকেই পাটুল ঘাট থেকে নৌকা বা স্পীড বোট ভাড়া করে অথৈ জলরাশির হালতি বিলে বেড়িয়ে নির্মল আনন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা রাস্তায় দলবেঁধে হেঁটে বেড়ান। পানিতে আনন্দ ভ্রমণের এমন নির্মল আনন্দের সুযোগ এর আগে এ অঞ্চলের মানুষের আর মেলেনি। ভ্রমনকারেিদর সাথে কথা বলে জানা যায় শহর জীবনের রুটিন বাঁধা এক ঘেঁয়েমির ক্লান্তি দুর করতে তারা বর্ষা মৌসুমে সুযোগ পেলেই হালতি বিলে চলে আসেন। সেখানে এলে তাদের মনটা অনেকটাই আনন্দে ভরে যায়। হালতি বিলকে কেন্দ্র করে অনেকের আয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আগে একজন মাঝির দিনে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আয় হতো আর এখন হচ্ছে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা। স্থানীয় এক নৌকার মাঝি জানান, এখন প্রতিদিন সে করছে গড়ে আটশ’ টাকারও বেশী। জনসমাগম দেখে পাটুল বটতলায় স্থানীয়ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো হয়েছে বেশ কিছু দোকান-পাট ও মটর সাইকেল গ্যারেজ। শত শত মানুষের ঢল নামায় সেখানে হকারদেরও ভিড় বেড়েছে। মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, ফল-মুল, চা-বিস্কুট, লজেন্স, চকলেট, পান-সিগারেট এমনকি চুড়ি-মালা আর কসমেটিক্সের পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এতো মানুষের আগমনে হালতি বিল এখন ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে মুখরিত। এত কিছুর পরও এখানে কোন টয়লেট সুবিধা নেই। নেই কোন ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। ঘাটে বসে থাকারও তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে পাটুল ঘাট এবং হালতির বিল এলাকায় আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ নিয়োজিত করেছে।