Opu Hasnat

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ওপর হামলা, শহরে বিক্ষোভ খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ওপর হামলা, শহরে বিক্ষোভ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর পর এবার প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের লাঠিপেটার শিকার হয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: রইছ উদ্দিন। শুক্রবার শহরের আদালত সড়কস্থ(থানার নীচ) শহীদ মিনারের সামনে তাঁর মোটর সাইকেল গতিরোধ করে এলোপাতাড়ী ভাবে লাঠিপেটা চালিয়ে গুরুতর জখম করে ক্যাডাররা। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করে। 

এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে শহরে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহেদুল আলমের অনুসারীরা। মিছিল পরবর্তী শাপলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে রোববার খাগড়াছড়ি পুরো জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি মুক্তিযোদ্ধাদের পালনের ঘোষনা দিলেও শনিবার বিকেলে প্রশাসনের অনুরোধে প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে হরতালের ঘোষনা দেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে জেলা আওয়ামীলীগের (এমপি গ্রুপ) উদ্যোগে নির্মলেন্দু চৌধুরীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষনার পর মিছিলটি ফেরার পথে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিনের ওপর আওয়ামীলীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে এলোপাতাড়ী হামলা চালায়। এসময় তাঁর (মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার) ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ভাংচুর চালানো হয়। কর্তব্যরত পুলিশ ও মিছিলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে(চমেক) প্রেরণ করে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ৫০-৬০টি মোটর সাইকেল যোগে নেতাকর্মীর বহর নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান খাগড়াছড়ি পৌর সভার মেয়র রফিকুল আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাহেদুল আলম, আওয়ামীলীগ নেতা দিদারুল আলমসহ শতাধিক নেতা-কর্মী এবং জেলার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা।

খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক(আরএমও) নয়নময় ত্রিপুরা জানান, আহত রইছ উদ্দিনের বাম হাতে ও বাম উরুতে আঘাত গুরতর হওয়ায় প্রথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(চমেক) প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: রইছ উদ্দিনকে দেখতে যান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরী। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও পাজেপ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ প্রেসক্লাব সম্মুখে সমাপ্তি ঘোষনার পর নেতাকর্মীরা ফিরে যান। আমিও তখন বাংলোতে ফিরে যায়। পরে খবর পেলাম মিছিলটি যাওয়ার পথে কে বা কারা এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে, যা দু:খজনক।

এদিকে হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিকদের পৌর মেয়র রফিকুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি ২৯৮নং আসনে সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার দোহাই দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগকে বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীরা গ্রাস করেছে। তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা ও তার ছেলে জুয়েল চাকমা এবং পাজেপ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুকে দায়ী করেছেন। এসময় তিনি প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘খাগড়াছড়ি প্রশাসন রোগী মারা যাবার পর চিকিৎসা শুরু করেন’’। তিনি অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবী জানান।

অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা(বীর মুক্তিযোদ্ধা) রণবিক্রম ত্রিপুরা বলেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: রইছ উদ্দিনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে আমি জেনেছি। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমার জানা নেই।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রইছ উদ্দিনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় হতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাহেদুল আলমের অনুসারী ও মুক্তিযোদ্ধারা। বিক্ষোভ মির্ছিলটি আদালত সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাপলা চত্বর পৌছে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ হতে জাহেদুল আলম মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার খাগড়াছড়ি পুরো জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষনা দিয়ে সভা সমাপ্তি করেন। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত আটক ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করে খাগড়াছড়িতে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেন। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তাতীঁ দলের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম বকুল, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলম, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজসহ অংঙ্গ-সংগঠন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতৃবৃন্দরা এতে অংশ নেয়।

এসব ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা রইছ উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি, তবে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সচেষ্ঠ রয়েছে।

প্রসংগত: গত বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় জেলা আওয়ামীলীগের যগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার পর, দুপুরে লাঠি মিঠিল ও জেলা আওয়ামীলীগের অফিসে হামলা, ভাংচুর ও পরে শুক্রবার একই ঘটনায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা শহরের নারিকেল বাগান এলাকায় জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক, পাজেপ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। তিনি বর্তমানে চমেকে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে খাগড়াছড়ির রাজনৈতিক অঙ্গন। জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও সাধারন সম্পাদক জাহেদুল আলমের মধ্যে পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট কোন্দলের যাতাকলে স্থানীয় প্রশাসনও বেসামাল হয়ে ওঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিমত!