Opu Hasnat

আজ ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ২০২৪,

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে পুলিশ ১০রাউন্ড রাবার বুলেট

খাগড়াছড়িতে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ২৫, আটক ৪ খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ২৫, আটক ৪

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মহান বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের একাংশ ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৫নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১১টার সময় শাপলা চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় কোর্ট সড়ক ও নারিকেল বাগান প্রধান সড়কে সংঘর্ষে রণ ক্ষেত্র পরিনত হলে চর্তুদিকে সাধারন মানুষের আতংক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীবাহি বাস, টম টম, অটোটে´র যানবাহন ঘন্টাখানিক বন্ধ থাকে। সংঘর্ষে সময় পুলিশের এএসআই রাসেল ও কনস্টেবল মাসুদ, জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমএন আবছার, বিএনপি নেতা মোমিন আলী, রবিউল, দেলোয়ার, নাছির তালুকদার ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আনিসুল আলম আহত হয়েছে।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে পুলিশ ১০রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হলে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাাফিজুর রহমান মিল্লাতসহ ৪জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বিজয় দিবসে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে আলীগ-বিএনপি’র মধ্যে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে জেলা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমএন আবছারের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে। 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহান বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা শহরের কলেজ রোড এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে শাপলা চত্বরসহ আশপাশের সব সড়কে দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শহরে অবস্থান করা পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের মাইনী ভ্যালীস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতি ফলকে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক দিয়ে ফেরার পথে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের জন্য উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগের ১৩নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবী করেছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম। তিনি জানান, জেলা বিএনপি’র বিজয় দিবসের র‌্যালি থেকে বিনা উস্কানিতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৩নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।

পাল্টা অভিযোগ তুলে জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভূইয়া জানান, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম সমর্থিতরা তাদের কার্যালয় থেকে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে হামলা চালিয়ে ১২নেতা-কর্মীকে আহত করে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে উল্টো লাঠিচার্জ ও আটক করে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করে। আটক নেতা-কর্মীদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবী জানান তিনি।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে মেয়র রফিকের নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনি দ্বারা শান্তিপুর্ন র‌্যালীতে হামলা করে । মহান বিজয় দিবসে র‌্যালী, স্মৃতি স্তম্ভে ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পন করে। পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে র‌্যালী করে দলীয়  কার্যালয়ে ফেরার পথে হিল কিং কাউন্টারের ছাদ থেকে অনবরত ইট মারতে থাকে র‌্যালিতে থাকা নেতা-কর্মীদের উপর। এই হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ১২ জন। এর মধ্যে গুরুত্বর আহত হয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক এম এন আবছার, জেলা বিএনপির গফুর তালুকদার, উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান, খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মোঃ ফারুক মিয়া, জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদক আমির খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের মো: কামাল হোসেন, মো: লতিফ, মো: মামুন, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারন সম্পাদক মো: সাহেদ সুমন, মো: আনিক। এদের মধ্যে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ার কারণে পুলিশ হেফাজতে এমএন আবছারকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মিল্লাত, জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম এন আবছার সহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। মহান বিজয় দিবসের শান্তিপুর্ণ র‌্যালিতে এ অতর্কিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সুষ্ঠ বিচার এবং আটককৃত নেতৃবৃন্দদের নি:শর্তে মুক্তি দেওযার দাবি জানান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ কর্ম সংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভ‚ইয়া। খাগড়াছড়ির জেলা বিএনপি সহ-দপ্তর সম্পাদক (ভাঃ) মোঃ আবু তালেব স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ নয়ন ময় ত্রিপুরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে এমএন আবছার নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের এএসআই রাসেল ও কনস্টেবল মাসুদ আহত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে আসার সময় নারিকেল বাগানস্থ আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় দলের নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট- পাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয় পক্ষের ২৫নেতা-কর্মী আহত হয়। 

উল্লেখ্য, বিগত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ। জেলা আওয়ামীলীগের মূল অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ২৯৮নং আসনে সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা আর অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহেদুল আলম ও তার ছোট ভাই মেয়র মো: রফিকুল আলম। বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের নেতৃত্বাধীন অংশ।