Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

এসডিজি : বিশ্বে বাংলাদেশকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করুন অর্থ-বাণিজ্য

এসডিজি : বিশ্বে বাংলাদেশকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতকরণসহ এসডিজি-৬ অর্জনে বাংলাদেশকে বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠার জন্য কৌশলপত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি-৬ অর্জনেও বাংলাদেশ যাতে বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বা ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠতে পারে তার কৌশলপত্র তৈরি করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এমডিজি’র মত এক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য অর্জিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৬) বাস্তবায়নে আয়োজিত জাতীয় কর্মশালার উদ্বোধনী ভাষণে এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ( এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা-৬) : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। আমরা শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই।’

জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে- পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী এম নজরুল ইসলাম বীর প্রতীক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান বক্তৃতা করেন।

জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি বিষয়ক প্যানেলের বিশেষ উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনা বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যেই ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি, ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সুয়ারেজ এ্যাক্ট-১৯৯৬, জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন নীতিমালা করেছি (১৯৯৮) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (১৯৯৭) প্রণয়ন করেছে। সেইসাথে পানি আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন এ্যাক্ট-২০১৪ প্রণয়ন করেছি। শতবর্ষের পরিবর্তনের গতি মাথায় রেখে পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ হচ্ছে-বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২০১০’।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পানির গুরুত্ব বুঝতে পেরে জাতির পিতা ১৯৭২ সালে আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন গঠন করেন। স্বাধীনতার পরই তিনি উপলব্ধি করেন-বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নের সাথে নদ-নদী ও পানি সম্পদ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের সরকার ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ৬১ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছে। উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগের পরিমাণ বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে (দশমিক ৮৮) নেমে এসেছে। যা ২০০৩ সালেও ৪২ শতাংশ ছিল। এ বিষয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সময় ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই দু’টি ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য আসবে।

কৃষিতে সেচ কিংবা শিল্পায়নসহ শহর উন্নয়নের কারণে পানির চাহিদা বেড়েই চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের নানা প্রভাবসহ বাংলাদেশে খরায় পানির সঙ্কট এবং বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা দুর্যোগে অঢেল পানির অপচয়ও হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে শুকনো মৌসুমে এখই পানি দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গী ছিল- ‘উন্নয়ন হবে দেশীয় পদ্ধতিতে কিন্তু মান হবে আন্তর্জাতিক’। তাঁর দেখানো পথেই পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থিত পানির সংরক্ষন ও ব্যবহার উপযোগী করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।

জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইন ও বিধিবিধানের পরিবর্তন এবং সময় উপযোগী অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড ভিত্তিক তৃণমূলের প্রান্তিক মানুষের কাছে এসব সুবিধা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশেষ শ্রেণীর জনগোষ্ঠী (শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে) কিংবা বিশেষ এলাকাভিত্তিক (লবণাক্ততা কিংবা আর্সেনিক যুক্ত এলাকা) বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দক্ষতা এবং দ্রুততার সঙ্গে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি’তে ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের কথা থাকলেও আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে তা সরবরাহ করেছি।

নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী তার অবস্থান তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর মরক্কোর মারাকাস শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের বক্তব্যে আমি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছি।’

জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলা।

এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন। - বাসস

এই বিভাগের অন্যান্য খবর