Opu Hasnat

আজ ২০ এপ্রিল শনিবার ২০২৪,

আজ সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর

আজও চোখের জল থামেনি সিডরে নিহত মোরেলগঞ্জের ৯৩ পরিবারের বাগেরহাট

আজও চোখের জল থামেনি সিডরে নিহত মোরেলগঞ্জের ৯৩ পরিবারের

১৫ নভেম্বর ২০০৭। এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। লন্ডভন্ড করে দেয় প্রকৃতিও মানবতাকে । ধ্বংস স্তূপে পরিনত করে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৪৩৮ বর্গ কিলোমটিারের জনপদ। আজও চোখের জল থামেনি সিডরে নিহত ৯৩ পরিবারের । আজ সেই ভয়াল সিডরের ১০ বছর পূর্তি। দুঃসহ স্মৃতি আর বেদনায় জড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এই দিনটি। 

সিডর চলে গেছে কিন্তুু এর স্মৃতি চিহৃ  আজও রয়ে গেছে প্রতিটি জনপদে। সিডরের অগ্নিমূর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনো আঁততে উঠে নিজের অজান্তে। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই সব ধ্বংসযজ্ঞে পরিনত করে দিয়েছিল সিডর। এ ভয়াবহ সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেশ্বর আর পানগুছি নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। বলেশ্বর হয়ে পানগুছি হয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটা মানুষ আর জীবজন্তুকে। বলইবুনিয়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ নূর মোল্লা (৭০) বানভাসি জলোচ্ছাস থেকে তার স্ত্রীকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তুু সে পারেনি শেষ রক্ষা করতে। স্ত্রী নেহেরু বেগম (৬০)কে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সিডরের জলোচ্ছাসে। বৃদ্ধ স্বামীকেও কেড়ে নিয়ে গেছে নিষ্ঠুর সিডর। পরেরদিন স্ত্রী কাপড়ের আচঁল ধরা স্বামীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের একমাত্র পুত্র সেলিম মোল্লাও (৩৫) সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে সিডেরে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। প্রলংকারী সিডরে কেড়ে নিয়েছে নিষ্পাপ শিশু স্বাধীন (৯)কে। পানগুছি নদীর তীরবর্তী  বারইখালী গ্রামের জেলে জাহাঙ্গীরের পুত্র স্বাধীন। পিতা সিডর যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের মত সমুদ্র থেকে ফিরে আসলেও ফিরে আসেনি তার পুত্র স্বাধীন। তার মা এক শিশুকে কোলে নিয়ে এবং স্বাধীনের হাতধরে পানগুছির পাড় বেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে জলোচ্ছাস মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বাধীনকে। 

অত্র উপজেলা বলইবুনিয়া, বারইখালী, খাউলিয়া, চিংড়াখালী ইউনিয়নের নিখোঁজ ১৫-২০ জন জেলে আজও ফিরে আসেনি সমুদ্র থেকে। সিডর তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সিডরে উত্তর বারইখালী গ্রামের সমুদ্রে নিখোঁজ জেলে মান্নান শেখের স্ত্রী আজও স্বামী আসবে বলে পথ চেয়ে আছে। সরকারি হিসেবে সিডরে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। পঙ্গুত্ববরণ করেছে হাজার খানেক মানুষ। উপকূলীয় এলাকায় সবুজের সমারোহকে ধ্বংস যজ্ঞে পরিনত করেছে । প্রভূত ক্ষতি হয়েছে বৃক্ষরাজি আর উঠতি ফসলের। সিডরে ২১৬৫ হেক্টর জমির উফসি ফসল এবং ১২ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমির আমন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। ৪২৩৫ টি  পুকুর ও ৪১৭০টি মৎস্য ঘের ডুবে যায়। বিদ্যুতের রিভার ক্রসিং সুউচ্চ টাওয়ার দুমড়ে মুছড়ে পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে ২৬ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। প্রলংকারী সিডরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের । এর মধ্যে ১৩১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ১৫৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্ধ হয়ে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। উপজেলা ১৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সব মিলিয়ে ১৯০৩৭ টি পরিবারের বসত ঘর সম্পূর্ণ এবং ৪৩২২৬ টি পরিবারের বসত ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।