Opu Hasnat

আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার ২০২৪,

বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্য : ফ্রান্সকে টপকে গেলো স্পেন প্রবাস

বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্য : ফ্রান্সকে টপকে গেলো স্পেন

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ইউরোপে বাংলাদেশের ‘এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশন’ দেশের তালিকায় ফ্রান্সকে টপকে প্রথম বারের মতো তিন নম্বর স্থানে চলে এসেছে স্পেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্জিত এই আশাব্যঞ্জক অ্যাচিভমেন্টের খবরটি নিশ্চিত করেছেন মাদ্রিদে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ এই ১২ মাসে বাংলাদেশ থেকে স্পেনে রপ্তানী হয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন (১৯৯৮.৯০ মিলিয়ন) ইউএস ডলারের পন্য। তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে এক নম্বর দেশ জার্মানী (+৩ বিলিয়ন) এবং দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানকারী দেশ যুক্তরাজ্যের (+২ বিলিয়ন) পর ফ্রান্সের অবস্থান এতোদিন ছিলো তিন নম্বরে। কিন্তু নানান বাস্তবতায় এই তালিকায় ফ্রান্স (১৮৬৬.১৯ মিলিয়ন) এখন তিন থেকে চারে নেমে এসেছে।

বিস্তারিত জানতে কথা হয় স্পেন ও ফ্রান্স উভয় দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সাথেও। মাদ্রিতে গত দেড় বছর ধরে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, “২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমাদেরকে যে ১৯০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়েছিল সেটা খুব সাফল্যের সঙ্গেই আমরা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। স্পেনের সাথে বাংলাদেশের এক্সপোর্টের ভলিউম এমনিতেই বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কিছু ফিক্সড স্পেনিশ রিটেইলার যেমন ‘জারা’ আছে, ‘ইনডিটেক্স’ এরকম কিছু ফিক্সড রিটেইলারের মাধ্যমেই প্রতি বছর আমরা রপ্তানী বানিজ্যের টার্গেট অতিক্রম করে যাচ্ছি। গার্মেন্টস যথারীতি আমাদের মেইন এক্সপোর্ট তবে আমার মনে হয় এটার ওপর নির্ভর করে না থেকে প্রোডাক্ট ডাইভারসিফাই করতে হবে এবং এক্সপ্লোর করতে হবে কী কী ক্ষেত্রে সেটা করা যায়”।


কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নাভিদ শফিউল্লাহ স্পষ্ট করেই বললেন, “প্রোডাক্ট ডাইভারসিফাইয়ের বিষয়টি এখন বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। কিছু প্রমিজিং প্রোডাক্টের কথা আমি বলতে পারি যেমন ফার্মাসিউটিক্যালস আরো বেশি এক্সপ্লোর করতে হবে স্পেনে। ফুটঅয়্যার এবং সিরামিকের পাশাপাশি এগ্রোবেইজড ফুডও অগ্রাধিকার পেতে পারে। জুট প্রোডাক্টের ডিজাইনটাকে যদি আমরা একটু পরিবর্তন করে ফ্যাশানেবল করতে পারি, কারন ওরা কিন্তু ট্রেডিশনাল ডিজাইন পছন্দ করে না। তাদের চাহিদা মতো আমরা দিতে পারলেই কাজের কাজ হবে বাংলাদেশের জন্য। আর আইসিটি খাতের কথা তো আমরা সবাই জানি, এটি বাংলাদেশের একটি প্রমিজিং সেক্টর। এখানটায় আরো বেশি ইনভেস্ট করা গেলে টোটাল ট্রেড ভলিউম অনেক অনেক বাড়বে। আমি মনে করি, এক দশকের মধ্যে আমাদের বৈদেশিক রপ্তানীতে গার্মেন্টস সেক্টরেকে ছাড়িয়ে যাবে আইসিটি সেক্টর”।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্পেনে বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও টার্গেট পূরণ হয়নি ফ্রান্সে। উভয় দেশের জন্যই ১৯০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ঢাকার রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ফ্রান্সে বিগত সাড়ে তিন বছর যাবত কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ফিরোজ উদ্দিন জানান, “গত অর্থবছরে ১৮৬৬.১৯ মিলিয়ন ইউএস ডলারের পন্য রপ্তানী করে বাংলাদেশ। যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারিনি তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানী বেড়েছে ফ্রান্সে”। স্পেনের পেছনে পড়ে যাওয়ার কারন ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদের কারনে ছোট ছোট ক্লায়েন্টরা ফ্রান্সে আসা কমিয়ে দিয়েছে। সবচাইতে বড় কারন হচ্ছে, পূর্ব ইউরোপ সহ রাশিয়ান ব্লকের দেশগুলোর ‘হাব’ হিসেবে কাজ করতো ফ্রান্স অর্থাৎ এরা প্রথমে এখানে ইমপোর্ট করে পরে ঐসব অঞ্চলে পাঠাতো। ‘হাব’ হিসেবে ফ্রান্সের সেই কাজটি এখন চলে গেছে জার্মানদের হাতে। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রপ্তানী বানিজ্যের ওপর সেই প্রভাবই পড়েছে”।