Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

জঙ্গীবাদ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে প্রতিবন্ধকতা : রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ প্রবাস

জঙ্গীবাদ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে প্রতিবন্ধকতা : রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি এবং রেপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (RAB)-এর সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমানে স্পেনে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার মনে করেন, জঙ্গীবাদের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা বিদেশে আমাদেরকে অবশ্যই কিছুটা বিপর্যস্ত করে, তবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করতে পারবে না যদি না আমরা তা মোকাবেলা ও নিয়ন্ত্রণে আরো সক্রিয় হই।

তাঁর ভাষায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দেশে বিদেশে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে, একসাথে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত বলেন, “যা ঘটেছে সম্প্রতি সেটা অবশ্যই অনভিপ্রেত, দুঃখজনক এবং নিঃসন্দেহে জঘন্য অপরাধমূলক কর্মতৎপরতা”।

রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, “জঙ্গী তৎপরতার আমরা শুধু সমালোচনাই করবো না, এটার বিরুদ্ধে শুধু বিক্ষুব্ধই হবো না বরং এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে এটার একটা স্থায়ী সমাধান কিংবা স্থায়ীভাবে কীভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আনা যায়, সেটার জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। এ কারনে আমি যেটা ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তা হচ্ছে, মূলত দু’টো দিকে সংশ্লিষ্টরা কাজ করতে পারেন। একটি হচ্ছে আইনানুগ ব্যবস্থা যেটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথেষ্ট ধৈর্য, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেমের পাশাপাশি কার্যকরী তৎপরতার মাধ্যমে এই দায়িত্ব পালন করছে। আরেকটি ব্যাপকতর ব্যাপার যে বিষয়টা আমি মনে করি ব্যাপকভাবে দেখতে হবে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, তা হচ্ছে এই যে জঙ্গী তৎপরতা, এই নাশকতামূলক সমাজবিরোধী রাষ্ট্রবিরোধী জনবিরোধী কর্মতৎপরতা, এটার বিরুদ্ধে সকলকে একত্রিত করতে হবে”।

বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী দু’টি সংস্থার শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকারী হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, “জঙ্গীবাদ মোকাবেলা বা নিয়ন্ত্রণে অনেকেই বলেছেন সামাজিক আন্দোলনের কথা। আমি মনে করি সামাজিক আন্দোলন এমন একটা ব্যাপার যাতে সকলকে সম্পৃক্ত করতে হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে তাদের পাশাপাশি দেশের সাধারন নাগরিকরা যারা পরোক্ষভাবে এটার সঙ্গে জড়িত তাদেরও পরোক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার ব্যাপার আছে। সুতরাং আমি মনে করি জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য যে তৎপরতা কিংবা যে উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে, সেগুলো ব্যাপকভাবে নেয়া উচিত এবং এখানে কোন রকম কালক্ষেপণ করা উচিত হবে না। কোন কিছুই এখানে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না বরং একাগ্রতা ও দেশপ্রেম নিয়ে সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত জানান, “ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো, এই জঙ্গীবাদী সমাজবিরোধী নাশকতামূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া যাবতীয় উদ্যোগের প্রতি আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আমি নিজে একজন প্রাক্তন পেশাদার হিসেবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন সাবেক সদস্য হিসেবে বলতে পারি, সরকারের সময়োচিত উদ্যোগ কার্যকর হচ্ছে”। গোয়েন্দা বিভাগের কর্মতৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো করা হচ্ছে, যথেষ্ট সমন্বয় আছে বলেই আমার মনে হচ্ছে। কিছু কিছু কর্মতৎপরতা যেটা দৃশ্যমান হচ্ছে, সমন্বয় না থাকলে সেটা সম্ভব ছিলো না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এখানটায় যথেষ্ট সুখকর। আমি মনে করি সংশ্লিষ্ট যারা আছেন বিশেষ করে গোয়েন্দা বিভাগ সহ মাঠ পর্যায়ে, তাদের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয় আছে এবং এই সমন্বয়ের একটা কার্যকর সম্মিলনের ফসল সামনে দেখতে পাবো বলে আমি আশাবাদী”।

রাষ্ট্রদূত হাসান মাহমুদ খন্দকার আরো বলেন, “একজন কূটনীতিবিদ হিসেবে এটুকু বলতে পারি যে, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটা কিন্ত আমরা বিশ্বের দরবারে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করছিলাম এবং সবকিছু খুব ভালো ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা বা অনভিপ্রেত ঘটনা আমাদেরকে অবশ্যই কিছুটা বিপর্যস্ত করে। তবে আশার কথা, আমরা সকলে সচেতন আছি। জঙ্গীবাদের মতো অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে বহিঃর্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আর বিনষ্ট করতে না পারে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে এবং একটা রোলমডেল হিসেবে আমরা যেভাবে বৈশ্বিকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছি, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আমরা যারা দায়িত্বে আছি, অবশ্যই পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের নিজেদের প্রতি, নিজেদের দায়িত্বের প্রতি। বাংলাদেশেও সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, আমি মনে করি এই ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা উচিত”।