Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

সিঙ্গাপুরে পেশা ভিত্তিক দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে এবং থাকবে প্রবাস

সিঙ্গাপুরে পেশা ভিত্তিক দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে এবং থাকবে

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ‘স্মার্ট নেশন’ ধারনাপত্রে সিঙ্গাপুরে শুধুমাত্র দক্ষ কর্মীদেরই স্বাগত জানানো হয়। অতীতের মতো বর্তমানেও তাই দেশটিতে পেশা ভিত্তিক দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে দায়িত্বরত হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান।

তিনি বলেন, “এদেশে স্থানীয় কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৫ জনের ১ জন ৬৫ বছরের উর্ধ্বে এবং এ অনুপাত ভবিষ্যতে আরো বাড়তে থাকবে বাংলাদেশের অনুকূলে। উৎপাদনশীল দক্ষ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে অন্য দেশ থেকে দক্ষ কর্মী সহ সেবা প্রদানকারী কর্মী আণয়নের বিকল্প নেই এদেশে। আমাদের বাংলাদেশে বিদেশগমনেচ্ছুক কর্মীদের তাই দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদানের সর্বাত্মক চেষ্টা সহ ‘কেয়ার গিভার’ তৈরী করতে হবে”।

সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুবিধ বিষয়াদি নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান জানান, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সময়ের পরিক্রমায় দু’দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী অংশীদার হিসেবে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশে শীর্ষ দশ বিনিয়োগকারী দেশের একটি। পৃথিবীর অন্যতম দক্ষ জনগোষ্ঠীর দেশ সিঙ্গাপুর সবসময় বাংলাদেশের নানাবিধ পেশাজীবিদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। নিয়মিত ভাবে মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে পারষ্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সফর ও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে”।

পেশাদার কূটনীতিক মাহবুব উজ জামান আরো জানান “বাংলাদেশ থেকে দক্ষতা অর্জন করে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার কর্মী বর্তমানে সিঙ্গাপুরে নির্মাণ ও জাহাজ শিল্প সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মরত আছেন। সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশী কর্মীদের অবদান সবসময় স্থানীয়ভাবে স্মরণ করা হয়। বাংলাদেশে শীর্ষ দশ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী দেশের মধ্যেও সিঙ্গাপুর অন্যতম। সিঙ্গাপুর থেকে বৈধভাবে গতবছর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের পরিমাণ ছিল ৪০৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৯৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

হাইকমিশনার বলেন, “সিঙ্গাপুর একাধারে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানীকারক দেশের একটি। ২০১৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বানিজ্য বিগত বছরের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ বেড়ে ৩.৩ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারে উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে ১৬৭ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের পণ্য রপ্তানীর বিপরীতে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আমদানীর পরিমাণ ছিল ৪.১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে রপ্তানীকৃত পণ্যের তালিতায় রয়েছে তৈরী পোষাক, নাফতা, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পন্য, জুতা, ব্যাগ, তাজা সবজি এবং হিমায়িত মাছ।

অন্যদিকে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আমদানীকৃত পণ্যের তালিকায় রয়েছে পেট্রোলজাত পণ্য, শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান, কাপিটাল মেশিনারী, কম্পিউটার এবং এর যন্ত্রাংশ, নন-ফেরাস মেটাল, ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ”।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে সিঙ্গাপুর ১৪০.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে বলে জানান হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান। বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। হাইকমিশনার বলেন, “১৬ বছর আগে ২০০০ সালে সিঙ্গাপুর কোঅপরেটিভ এন্টারপ্রাইজ এবং বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন্স অথরিটির মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির সুফল ভোগ করেছে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর এখানকার ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ (আইই) এবং আমাদের কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে বর্তমানে”।

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এর শাংরি-লা ডায়ালগের আয়োজক দেশ সিঙ্গাপুর। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ইস্যুতে এশিয়ার বৃহত্তম আলোচনা আয়োজন এই ডায়ালগে প্রতিবছর বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন বলে জানান হাইকমিশনার।

তিনি বলেন, “ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (এনইউএস)’র অধীনে ই-গভর্নমেন্ট লিডারশিপ সেন্টার (ইজিএলসি) কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের ‘ই-গভর্নেন্স’ বিষয়ে বিগত প্রায় ২ বছর ধরে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। নিয়মতভাবে আমাদের চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সিঙ্গাপুরের হাসপাতাল সমূহে অবস্থান করে পেশাগত দক্ষতা অর্জন করে আসছেন। এশিয়ায় জলদস্যু প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থা 'দ্য রিজিওনাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট অন কমবেটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি এগেইনস্ট শিপ ইন এশিয়া' (রিকাপ), সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য বাংলাদেশ“।

বাংলাদেশের এনার্জি খাত সহ পর্যটন, দক্ষতা উন্নয়ন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাত এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সিঙ্গাপুর থেকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার মাহবুব উজ জামান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আসিয়ান-এর ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ পণ্য আমদানী-রপ্তানীতে পরিবহন ব্যয় হ্রাস সহ অদূর ভবিষ্যতে ম্যারিটাইম কোঅপারেশন এন্ড ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট হওয়ার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে নিয়মিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দু’দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সহ ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নিবিড় নেটওয়ার্কিং শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। সিঙ্গাপুরের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সহসাই বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে একটি ‘সিঙ্গাপুর এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন’ স্থাপনের বিষয়টিও বিভিন্ন আলোচনায় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে”।