Opu Hasnat

আজ ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০২৪,

বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার : কেন হবে আপনার প্রথম পছন্দ শিক্ষামতামত

বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার : কেন হবে আপনার প্রথম পছন্দ

চাকুরিপ্রার্থীরা এখন ব্যস্ত অনলাইনে ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণ নিয়ে। আর অনলাইনে আবেদন করার সময় ক্যাডার পছন্দক্রম বা প্রথম পছন্দ নিয়ে অনেকেই দ্বিধান্বিত হচ্ছেন। পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখার মত এমন অনেক ক্যাডার আছে যা সম্পর্কে সবার ধারণা নেই। এক্ষেত্রে বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। আসুন জেনে নেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার সম্পর্কে।
 
বিসিএস (ইকোনমিক) : 
আশির দশকে বাংলাদেশে একটি টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার। পরবর্তীতে ২৮তম বিসিএস থেকে এটিকে সাধারন ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল কাজ হল সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ইত্যাদিতে সহায়তা প্রদান করা। এই ক্যাডারে একজন কর্মকর্তা যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করছি :
 
বিদেশ ভ্রমণ :
বিদেশ ভ্রমণ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পায় বিসিএস (পররাষ্ট্র) ও বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তারা। চাকুরিতে যোগদানের পরপরই ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ শুরু হয়। বছরে একজন কর্মকর্তা গড়ে ৩/৪ বার বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পায়। সমগ্র চাকুরিজীবনে আপনার ৫০টিরও বেশি দেশ ঘুরা হবে। আমাদের ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিগত ৪ বছরে গড়ে ৯/১০ টি ঘুরা হয়ে গেছে।
 
বেতনসহ দেশে/বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তির সুযোগ :
বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাজগুলো প্রকল্প ও গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তারা দেশে/বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য পর্যাপ্ত বৃত্তির সুযোগ পান। তাছাড়া যেকোন বৈদেশিক বৃত্তিতে আবেদন করলে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, সরকারি চাকুরি বিধি অনুসারে একজন সরকারি কর্মকর্তা দেশে/বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর প্রেষণ পান। এসময় চাকুরির পূর্ণ বেতনও পাওয়া যায়। কোন কারনে অতিরিক্ত সময় লাগলে আরো ২ বছর অর্ধেক বেতনে শিক্ষা ছুটি পাওয়া যায়।
 
সারাজীবন ঢাকায় পোস্টিং :
ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পোস্টিং হয় মূলত মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে। এর বাইওে আর কোথাও এই ক্যাডারের পদ নেই। কাজেই সারাজীবন ঢাকায় থাকার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে, যারা ঢাকায় স্থায়ী, তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
 
বিদেশে পোস্টিংয়ের সুযোগ :
বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে ইকোনমিক মিনিস্টার, ইকোনমিক কাউন্সিলর, লেবার কাউন্সিলর ইত্যাদি পোস্টে নিয়োগ প্রদানওে ক্ষেত্রে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।বর্তমানে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্মরত আছেন।
 
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের সুযোগ :
বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক প্রয়োজনে দেশে-বিদেশে প্রচুর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হয়। ফলে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও দাপ্তরিক কাজের মাধ্যমে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে উঠে।
 
লিয়েনের সুযোগ :
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড সম্পাদনের ফলে বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে এবিষয়ে দক্ষতা গড়ে উঠে। পরে তা কাজে লাগিয়ে কর্মকর্তারা দেশ/বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় লিয়েনে একটানা সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত চাকুরি করার সুযোগ পায়। বর্তমানে ইকোনমিক ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত আছে। এছাড়া দেশের মধ্যে ইউএনডিপি, আইএলও ইত্যাদি সংস্থায় কর্মরত আছেন।
 
প্রকল্প পরিচালক হবার সুযোগ :
সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পতে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয় যা খুবই সম্মানজনক একটি পদ। এক্ষেত্রে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে থাকে।
 
সহজে পদোন্নতির সুযোগ :
ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা কম বলে এখানে পদোন্নতির সুযোগ অনেক বেশি। চাকুরিজীবনে একজন কর্মকর্তা প্রথমে সহকারী প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সিনিয়র সহকারী প্রধান, উপ-প্রধান, যুগ্ম-প্রধান, প্রধান এবং সর্বোচ্চ সদস্য (সচিব/সিনিয়র সচিব), পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত পদোন্নতি পেতে পারেন। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হয় বিসিএস পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে। কাজেই সিরিয়ালি সবাই পদোন্নতি পায়।
 
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবের একান্ত সচিব হবার সুযোগ :
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সুবাদে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। ফলে অনেক সময় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবগণ তাদের একান্ত সচিব করার ক্ষেত্রে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেছে নেন। বর্তমানে বেশ কয়েকজন ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবগণের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন যা অত্যন্ত সৌভাগ্য ও সম্মানের বিষয়।।
  
দেশের উন্নয়নে সরাসরি অংশগ্রহণ :
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা, কৌশলপত্র ইত্যাদি মূলত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা করে থাকেন। যেমন-৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, পিআরএসপি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ইত্যাদি তৈরীতে বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করে থাকেন।
 
বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার হল একটি সম্ভাবনাময় ক্যাডার। কর্মপরিবেশ, কর্মস্থান, কাজের ধরণ ইত্যাদি বিবেচনায় এটি সেরা ক্যাডারগুলোর একটি।  বিশেষ করে ২৮তম বিসিএস থেকে এটি জেনারেল ক্যাডার হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আজকাল অনেক মেধাবীদেরই প্রথম পছন্দ এই ক্যাডারটি। তাই দেরী না করে ধীরে সুস্থে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন কেন এটিকে ১ম পছন্দ দেবেন। আর বেশিদিন বাকী নেই ৩৭তম বিসিএসের আবেদনের। সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনই। সবার প্রতি শুভ কামনা রইল।

লেখক : হারুন-অর-রশিদ সাগর
বিসিএস (ইকোনমিক) ক্যাডার, ৩০তম ব্যাচ