Opu Hasnat

আজ ২৯ মার্চ শুক্রবার ২০২৪,

ঝালকাঠিতে নৌকার বোঝা বহিষ্কৃত বিদ্রোহীরা, বিএনপিতে একক প্রার্থী ঝালকাঠি

ঝালকাঠিতে নৌকার বোঝা বহিষ্কৃত বিদ্রোহীরা, বিএনপিতে একক প্রার্থী

ঝালকাঠি জেলার ৩১ টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন আগামী ২২ মার্চ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তাঁদের কেউ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের স্বজন। প্রকাশ্যে দলের নেতাকর্মীরা বিদ্রোহীদের পক্ষে মাঠে রয়েছে। কয়েকটিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে। 

এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে জানা যায়, ঝালকাঠির ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে, নলছিটিতে ১০টি ইউপির মধ্যে চারটি, রাজাপুরে ছয়টির মধ্যে দুটি এবং কাঁঠালিয়ায় ছয়টির মধ্যে দুটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারাতে বিদ্রোহীরা শক্তি প্রদর্শন করছেন। জনপ্রিয়তা থাকা সত্তে¡ও দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানরাও। 

ঝালকাঠি সদর : এ উপজেলার কেওড়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক মঈন উদ্দিন তালুকদার। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছেন তিনি। এ বছর দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন টিপুকে। জনপ্রিয়তায় মঈন উদ্দিন এগিয়ে থাকা সত্তে¡ও দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে না গিয়ে অনেক নেতাকর্মী মঈনের উঠান বৈঠক ও প্রচারকাজে অংশ নিচ্ছে। এখানে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আরো একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের ছোট ভাই জেলা আওয়ামীলীগের উপপ্রচার সম্পাদক আবু সাইদ খান। তাঁর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। 

একই চিত্র গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন বর্তমান চেয়ারম্যান। তাঁকে বাদ দিয়ে এ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শেরওয়ানীকে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন লিটন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। 

নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম। এ নির্বাচনে তাঁর জনসমর্থন থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়ন দিয়েছেন রেজাউল কবিরকে। নজরুল বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ নজরুলের সঙ্গে প্রচারণায় নেমেছে। 

গাবখান ধানসিঁড়ি ইউপিতে দলের মনোনয়ন পাননি বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। তাঁর পরিবর্তে দলীয় মনোনয়ন পান শহিদুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জাকির। তাঁর পক্ষে দলের দুই তৃতীয়াংশ নেতাকর্মী প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে। এ ইউনিয়নে মনির হোসেন নামে আওয়ামী লীগের আরো একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর পক্ষে দলের কিছু নেতাকর্মী মাঠে রয়েছে। 

নবগ্রাম ইউপিতে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক আকন্দকে। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন  জেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান হিরু। শক্ত অবস্থান নিয়ে তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের বড় একটি অংশ তাঁর পক্ষে কাজ করছে। 

নলছিটি : এ উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নে টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এ কে এম আবদুল হক। দল থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন। দলের সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী হননি আবদুল হক। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুজ্জামান সেলিম। জনপ্রিয়তায় ভারী এ নেতার সঙ্গে রয়েছে উপজেলা ও ইউনিয়নের বেশির ভাগ নেতাকর্মী। পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। 

সুবিদপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও কর্মী-সমর্থকদের মন জয় করতে পারেননি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সিকদার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী সোহেল মল্লিকের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে দলের একাংশ। 

কুংশগল ইউনিয়নে জনপ্রিয়তা বেশি থাকা সত্বেও মনোনয়ন পাননি দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান সরদার। এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয় আলমগীর সিকদারকে। তিনি এলাকায় অল্প কিছু লোকজন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিদ্রোহী মতিউর রহমান সরদার। 

দপদপিয়া ইউপিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহরাব হোসেন বাবুল মৃধাকে টপকে যেতে পারেন বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান। 

রাজাপুর : সাতুরিয়া ইউপিতে জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও দলের মনোনয়ন পাননি সোবাহান খান। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। তবে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন সোবাহান খান। তাঁর পক্ষে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছে। একই অবস্থা মঠবাড়ি ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তফা কামাল সিকদার। বিদ্রোহী হয়েছেন আবদুর রব হাওলাদার। রবের পক্ষে বেশির ভাগ নেতাকর্মী প্রচারণায় নেমেছে। 

কাঁঠালিয়া : পাটকেলঘাটা ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান শিশির দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে সখ্য গড়ে তুলেছেন বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে। এর পরও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। জনপ্রিয়তা থাকা সত্তে¡ও দল মনোনয়ন বঞ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম হৃদয়কে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনি। প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পুরোদমে। 

একই অবস্থা আওড়াবুনিয়া ইউপিতে। সেখানে দলের মনোনয়ন না পেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। কামরুল ইসলাম লিটন ও আফজাল হোসেন পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন চলছেন সমর্থকদের নিয়ে।

উল্লেখ্য, এসব ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে বিএনপির একক প্রার্থী রয়েছে। ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে বিএনপি যাঁদের মনোনয়ন দিয়েছে, প্রত্যেকে এলাকায় জনপ্রিয়। সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে সব কয়টি ইউপিতে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হবেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রর্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে বিভিন্ন কর্মকান্ড করায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদর উপজেলায় ৮ জন, নলছিটি উপজেলায় ৬ জন, রাজাপুর উপজেলায় ৪ জন ও কাঠালিয়া উপজেলায় ৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়।