নরসিংদীর বই মেলায় কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী
কবিতায় কবির ম্যাসেজ থাকতে হবে নইলে কবিতা বলা যাবে না শিল্প ও সাহিত্য /  নরসিংদী / 
ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক নরসিংদী সরকারী কলেজ মাঠে আয়োজিত ১৪দিন ব্যাপী বই মেলার শুক্রবার অনুষ্ঠিত ‘স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, কবিতা হচ্ছে শব্দের খেলা। কবিতা কোন কোন সময় প্রাণ প্রাচুর্য দিয়ে ভরে উঠে। একুশে ফেব্রæয়ারি ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে অন্যতম। তিনি সেমিনারের আলোচক নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়ার “নতুন প্রজন্মের কাছে আধুনিক কবিতা দুর্বোদ্ধ” এই বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, কবিতায় কবির কোন ম্যাসেজ থাকতে হবে। নইলে তাকে কবিতা বলা যাবে না। পাঠক কবিতা পড়ে তখনই তা গ্রহণ করবে, যখন এর মধ্যে কোন ম্যাসেজ খুঁজে পাবেন। তিনি বলেন, অন্তমিল, উপমা, অনুপ্রাস জেনেই কবিতা রচনা করা উচিৎ। অবশ্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ কবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম অন্তমিল বিহীন কবিতা লিখতে শুরু করেন। কবিতা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সৃজনশীল জাতি গঠন করতে চাই। মন, প্রাণ এবং আত্মার শক্তি হলো একুশে ফেবব্রæয়ারি। এই ফেব্রæয়ারি মাসে নরসিংদীতে বিশাল বই মেলার প্রশংসা এবং তা উপভোগ করতে পারার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নরসিংদী জেলার মত বাংলাদেশের সর্বত্র যদি এমন বই মেলার আয়োজন করা হতো তাহলে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন খুব দ্রæত হবে।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লার রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে “স্বাধীনতাত্তর বাংলাদেশের কবিতা”-এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নরসিংদী সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর কালাম মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনিছুর রহমান, নারায়নগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ আনিছুর রহমান মিয়া, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস প্রমুখ।
প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন নরসিংদী সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম মোস্তাফা মিয়া।
সেমিনারে প্রধান অতিথি কবি কামাল চৌধুরী মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার সারা বাংলাদেশে এবারও ৩২কোটি বই বিতরণ করেছে। বই বিতরণে সারা বিশ্বে আমরা নজীর সৃষ্টি করেছি।
তিনি বলেন, বই মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। বই যত পড়বো, ততই জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। তাই নতুন প্রজন্মের পাঠকদের যোগ্য পাঠক হিসেব গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে লেখক ও কবিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেমিনারে আগত অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি আপনারাও বেশী বেশী বই পড়বেন। উপস্থিত ছোট্ট সোনামনিদের উদ্দেশ্যে তিনি কবিতার আকারে দু’টি লাইন “তোমরা যারা চিরকালের ফুল ও পাখি, তাদের জন্য আমার কলম নদীর জলে ভাসিয়ে রাখি” পাঠ করে শোনান।।
প্রধান অতিথি বই মেলায় সুন্দর সুন্দর বই, স্টল, অনেক পাঠক ও প্রচুর লোকসমাগম দেখে জেলা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ঢাকার পরে মফস্বল শহরে এতবড় চমৎকার বই মেলা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। বই মেলায় ‘যদি যৌবন ফিরে পাই’সহ এ পর্যন্ত মোট ১০টি নতুন বই-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এবারের মেলা প্রাঙ্গনে ঢাকা থেকে আগত ৫টি প্রকাশনা সংস্থা সহ ৫২টি বই-এর স্টল স্থাপন করা হয়েছে।